যুক্তরাষ্ট্রে ফোন হ্যাকিং মারাত্মকভাবে বাড়ছে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:২৯ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার

নিউইয়র্কে ১ মাসে ৭৫ হাজার ফোন হ্যাক : টার্গেট হচ্ছেন নতুন ইমিগ্রান্টরা
আজকাল রিপোর্ট
আমেরিকায় ফোন হ্যাকিং মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ফোন হ্যাকিং-এর ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সাইবার সিকিউরিটি গবেষকরা বলেছেন, ফোন হ্যাকিং সম্প্রতি বেড়েছে শতকরা ৫০০ ভাগ। যাকে বলা হচ্ছে ‘মোবাইল ম্যালওয়ার’। আমেরিকার অন্য শহরগুলির তুলনায় নিউইয়র্কে ফোন হ্যাকিং-এর ঘটনা সর্বোচ্চ। গত এক মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে ৭৫ হাজারের মতো ফোন হ্যাক হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, ফোন হ্যাকাররা মরিয়া হয়ে উঠেছে তথ্য চুরিতে। তারা ফোনের পাসওয়ার্ড, ব্যাংকের তথ্য এমনকি পুরো ফোনটিরই দখল নিয়ে নিচ্ছে। ফোনের মালিক তা আর ব্যবহারই করতে পারছেন না। ফোনটি ফিজিক্যালি মালিকের কাছে থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে হ্যাকারের হাতে। ফোনের মালিক অন্য একটি সেট ব্যবহার করে কিংবা নতুন একটি ফোন কিনলেও তার পুরনো নাম্বারটি আর পাচ্ছেন না। প্রিয় নাম্বারটি পুনরুদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফোনের মালিককে। এতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।
অ্যাপল ও এনড্রয়েড স্মার্টফোনের গ্রাহকদের হ্যাকাররা বোকা বানাচ্ছে ‘এমএমএস ফিশিং’-এর মাধ্যমে। আর্কষণীয় তথ্য সম্বলিত টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে তারা ফোন ব্যবহারকারীকে ট্র্যাপে ফেলে দেয়। মেসেজটি ওপনে করার সাথে সাথে পাসওয়ার্ড কিংবা ব্যাংক ইনফরমেশন করায়ত্ত্ব হয়ে যায় হ্যাকারদের। এমনকি তারা ফোনের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ফোনে সেট করা বিভিন্ন অ্যাপসে ঢুকে পড়ে তারা। হাতিয়ে নেয় ব্যাংকসহ ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য। ভ্যারাইজন ও টি-মোবাইলের গ্রাহকরা তুলনামুলকভাবে কম আক্রান্ত হচ্ছেন। লাইকা, আলট্রা, মিন্ট, সিম্পল ফোনের গ্রাহকরা মারাত্মকভাবে হ্যাকারদের হামলার কবলে পড়ছেন। সম্প্রতি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও রাজনীতিক আমিনুল ইসলাম স্বপন ও আব্দুল বাতেনের ফোন হ্যাকারদের আক্রমনের কবলে পড়ে। স্বপন ২৬ দিন পর তার নাম্বার ফিরে পান। আবদুল বাতেনের ফোন ও ব্যাংক একাউন্ট উভয়ই হ্যাক হয়েছিল। জ্যাকসন হাইটসের বিগ ডিজাইনেরর কর্নধার মমিন মজুমদারের ফোন ২ সপ্তাহ ধরে হ্যাকারদের দখলে। তিনি তার ফোন কোম্পানী লাইকার সাথে বারবার যোগাযোগ করেও নাম্বারটি উদ্ধার করতে পারছেন না।
ফোন হ্যাকের ঘটনা নিউইয়র্ক সিটিতে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোন শহরের তুলনায় নিউইয়র্ক সিটিতে ফোন হ্যাকিং-এর হার সর্বোচ্চ। জ্যাকসন হাইটসের একজন ফোন ব্যবসায়ী জানান, গ্রাহকদের সিংহভাগ আসছেন তাদের ফোন হ্যাকিং এর অভিযোগ নিয়ে। তা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভ্যারাইজন, টি-মোবাইল কিংবা টিএন্ডটির গ্রাহকদের সমস্যা কম। ছোট ছোট কোম্পানীর গ্রাহকরা ফোন হ্যাকিং-এ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, বিশেস করে নতুন ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি কিংবা কাগজপত্রহীনরা এই সমস্যায় বেশি ভুগছেন। দেশ থেকে আসার পরপরই তারা সোশাল সিকিউরিটি নাম্বার পান না। ভ্যারাইজন, টি মোবাইল কিংবা টিএন্ডটির ফোন লাইন নিতে গেলে সোশাল সিকিউরিটি নাম্বার লাগে। নিরুপায় হয়ে ইমিগ্রান্টরা লাইকা, আলট্রা, মিন্ট বা সিম্পল ফোনের দ্বারস্থ হন। আর হ্যাকাররা তাদেরকেই আক্রমনের সহজ লক্ষ্যবস্তু মনে করে তাদের ফোনে হামলা চালায়।
অ্যাপল আইফোন কোম্পানীও হ্যাকিং মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। তারা কাস্টমারদের পাসকোড ব্যবহারের পরিবর্তে ফোন ওপেনিং এ ফেস আইডি বা ফিঙ্গার ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল মেট্রো নিউজ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত ১ মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে ৭৫ হাজারের মতো ফোন হ্যাক হয়েছে। টেলিফোন কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের অপরিচিত টেক্সট বা ইমেইল ওপেন না করতে বলেছে। তারা ফোন রিসিভ করতেও সর্তকতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন।