শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৬ ১৪৩১   ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অনিশ্চয়তার মুখে ২ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩৬ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী আশা কলেজ

 
মনোয়ারুল ইসলাম
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা ২ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তার অন্ধকার।  তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আশা’ কলেজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের স্টুডেন্ট ভিসার ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা এখন আাতঙ্কে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এই ভিসা বহাল থাকবে কি না তা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছে। অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারেও কোন নিশ্চয়তা নেই। আশা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সিটি ইউনিভিারসিটি অব নিউইয়র্ক (কিউনি) গ্রহন করবে কিনা কিংবা তাদেরকে নতুন কলেজ আই-২০ দিবে কিনা এসব প্রশ্নেরও কোন জবাব নেই। ইতোমধ্যেই সেমিস্টার লস শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এই বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা কি করবে তার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী স্টুডেন্ট ভিসা (এফ-১) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। এদের মধ্যে ২ হাজার শিক্ষার্থী আশা কলেজে এনরোলমেন্ট করেছে। কেউ বাংলাদেশ থেকে এসে সরাসরি আশা কলেজে, আবার অনেকে অন্য স্টেটের বিভিন্ন কলেজ থেকে ট্রান্সফার নিয়ে এই কলেজে এসেছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের শহর হিসেবে  নিউইয়র্ককেই বেছে নেয়। আশা কলেজও হয়ে ওঠে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গন। কলেজটির ম্যানহাটান ও ব্রুকলিন ক্যাম্পাস বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের পদচারনায় মুখর হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই এই বজ্রাঘাত কলেজটির সাড়ে ৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর ওপর। গত ২১ অক্টোবর কলেজের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেয়া হয় ‘আশা কলেজ নতুন করে এনরোলমেন্টের জন্য আবেদন গ্রহণ করছে না।’ ইতোমধ্যে তাদের ম্যানহাটান ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লোরিডার হিয়ালিয়ায় তাদের  তৃতীয় ক্যাম্পাসও বন্ধ। শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য ব্রুকলিনের ক্যাম্পাসটি খোলা রয়েছে। বর্তমান সেশনে এই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা স্বল্প পরিসরে অনলাইনে ক্লাস করছে।
বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আশা কলেজের বিরুদ্ধে স্টেট ও ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ বেশ কয়েকটি গুরুতর ভায়োলেশনের অভিযোগ দিয়েছে। আগামী ২৩ মার্চ ২০২৩ সাল থেকে কলেজটির অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল কওে দেয়া হচ্ছে।  হায়ার এডুকেশন কমিশনের স্ট্যান্ডার্ড পূরণ না করতে পারায় তাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এটি জানাজানি হবার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টারন্যাশনাল ছাত্র হিসেবে লাখ লাখ টাকা খরচ করে এদেশে এসে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাওয়া, কোথায় আবার ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে এমনি নানাবিধ দুশ্চিন্তায় তারা এখন বিদ্ধস্ত।  
হোয়াটস অ্যাপে ‘আশা কমিউনিটি’ নামে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের একটি সাইট খোলা আছে। এর সদস্য সংখ্যা ৪ ’শ-এরও বেশি। প্রতিনিয়ত তারা চ্যাটিং করছেন তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে। এই গ্রুপে রয়েছেন কলেজটির এডভাইজার আগাথা সাবিনা। তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলছেন, ধৈর্য হারাবে না। আমরা অন্য কলেজগুলোর সাথে কথা বলছি, যাতে তারা তোমাদের  ক্রেডিটগুলো গ্রহণ করে। তবে এ জন্য আমাদের সময়ের প্রয়োজন। একজন ছাত্রের টেলিফোনের জবাবে সাবিনা বলেছেন, আমাদের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল হবে আগামী মার্চে। এর আগেই তা ফিক্সড করা যায় কিনা সে চেষ্টা চলছে। এদিকে প্রতিদিন অসংখ্য উদ্বিগ্ন ছাত্রছাত্রী যাচ্ছেন ব্রুকলিন ক্যাম্পাসে। জানতে চাচ্ছেন পরিস্থিতির খবরাখবর। কিন্তু কিছুই জানতে পারছেন না। ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। অনেকে সিটির বিভিন্ন কলেজে গিয়ে ট্রান্সফার হবার নিয়ম কানুন জানার চেষ্টা করছেন। ইসরাত মুমু নামের একজন ছাত্রী স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আর আশা কলেজের পিছে ঘুরো না। ট্রাই টু গেট ট্রান্সফার রাইট নাও। আমি ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছি।’
আশা (এডভান্সড সফটওয়ার এনালাইসিস) কলেজটি ১৯৮৫ সালে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল। সর্বশেষ এর চাত্রছাত্রী সংখা ছিল সাড়ে ৪ হাজার। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাচেলর, এসোসিয়েট ডিগ্রী ও প্রফেশনাল সার্টিফিকেট প্রদান করতো। ৬০টি ফুলটাইম ফ্যাকাল্টি ছিল। অনিয়মের অভিযোগে ঐতিহ্যবাহী এই প্রাইভেট কলেজটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।