মঙ্গলবার   ১১ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৬ ১৪৩২   ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

সুবিধা হলো না ট্রাম্পের, রিপাবলিকানদের স্বপ্নভঙ্গ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪০ এএম, ১০ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

বিপুলসংখ্যক ভোটকক্ষ দখলের যে স্বপ্নে দেখছিলেন রিপাবলিকানরা সে স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাস্তবতা।
 

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করলেও আহামরি কোনো ব্যবধান নেই। যার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিভিন্ন জরিপেও এসেছিল সে তথ্য। ফলে কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা-মনমতো কোনো আইন প্রণয়ন কিংবা বাতিলের ক্ষমতাও পাবেন না তারা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকায় ডেমোক্র্যাটরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ পেয়ে যাবেন। করতে পারবেন সমোঝতাও।

মূলত তরুণ প্রজন্মের ভোটই উলটে দিয়েছে সমীকরণ। ‘লাল ঢেউ’ ঠেকাতে আশার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাট।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যালটে কোথাও নাম ছিল না সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু ট্রাম্প ছায়া হয়ে বড় ভূমিকায় ছিলেন এ নির্বাচনে। ইতোমধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করেছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনি প্রচারে ‘লাল ঢেউ’ তোলার যে আহ্বান ট্রাম্প করেছিলেন, তা বাস্তবে ফলেনি।

২০১৮ সালের পর রিপাবলিকানরা আবার প্রতিনিধি পরিষদ পুনরুদ্ধার করবে বলে ধারণা করছিলেন অনেকেই। রাতে যখন দেখাচ্ছিল রিপাবলিকানরা ১০০ আসনে এগিয়ে তখন ট্রাম্পের ‘বড় মিথ্যা’ অভিযোগকে সত্যি বলে অর্থাৎ ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেন জালিয়াতি করেছেন বলেও প্রচার চালাচ্ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্টের উচ্চপদস্থ নেতাকর্মীরা।

বাইডেনের শাসন তিরস্কারসহ মুদ্রাস্ফীতির যুদ্ধে সিনেট নিয়ন্ত্রণে রিপাবলিকানদের আর একটি আসন প্রয়োজন ছিল। হাতবদলের একমাত্র সুযোগটি হাতছাড়া করে ট্রাম্পের দল, বুধবার পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রগতিশীল নেতা জন ফেটারম্যান।

বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা লাভ করে ২০১ আসন যেখানে ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ১৮১ আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে জয়লাভ করতে হয় ২১৮টি আসনে।

সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়ের দখলে ৪৮টি করে আসন। সংবিধান অনুযায়ী সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ৫১টি আসন। জর্জিয়া, উইসকনসিন ও নেভাডায় সিনেটের ভোট গণনার ফলাফল প্রকাশ হয়নি। কক্ষ ধরে রাখতে ডেমোক্র্যাটদের আরও দুটি জয়ের প্রয়োজন ছিল যেখানে ফলাফল ঘোরাতে রিপাবলিকানদের দরকার ছিল তিনটির।

মুদ্রাস্ফীতি ও অপরাধের জন্য রিপাবলিকানরা বাইডেনকে দায়ী করেছিলেন। পণ্ডিতরা বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্যগতভাবেই দলের পরাজয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এছাড়াও ৮০ বছর বয়সি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক কমান্ডার ইন চিফ আবার আসবেন কিনা এ নিয়েও হতে হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের প্রার্থী কারি লেক ভোটিং মেশিনে সমস্যায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। সর্বাধিক জনবহুল কাউন্টি ম্যারিকোপারের কর্মকর্তা বলেন, ২২৩টি ভোটকেন্দ্রের প্রায় ২০ শতাংশ প্রিন্টার ঘটিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে সবাই ভোট দিতে পেরেছেন সুষ্ঠুভাবে।

নিম্নকক্ষের পরবর্তী স্পিকার প্রত্যাশী শীর্ষ রিপাবলিকান কেভিন ম্যাকার্থি বার্তা দিয়েছিলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আমরা হাউসে দখল পেতে যাচ্ছি।’ তবে ট্রাম্প মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম অকপটে স্বীকার করেছেন যে নির্বাচন রিপাবলিকান তরঙ্গ নয়।

এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৫০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে তা পেছনে ফেলতে পারেনি ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে।

এবারের নির্বাচনে এই ফলাফল ট্রাম্পের ‘সেলিব্রেটি’ ভাবধারার ক্ষেত্রে একটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সেন্টার অন ইউএস পলিটিকসের সহপরিচালক জুলি নরম্যান।

তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, কিছু বিজয়ের ঘটনা আছে। যেমন ওহাইওর জেডি ভ্যান্স। কিন্তু এর বাইরে অনেক ট্রাম্প-অনুসারী হয় হেরেছেন নয়তো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে আছেন এখন, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে তার যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে। সেই নির্বাচনে আবারও রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চান সাবেক ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেই নির্বাচনে যেন দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে না শামিল হন, সে জন্য দলের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী রন ডিস্যান্টিসকে রীতিমতো হুমকিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার জন্য আজ আবার খারাপ খবর হলো, ফ্লোরিডার গভর্নর পদে রিপাবলিকান পার্টির এই প্রার্থী বিপুলভাবে জয়ী হয়েছেন।