নারায়ণগঞ্জে জয়ের পথে মহাজোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৫৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থীদের জয়ের সমীকরণ ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। মহাজোটের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকটি আসনে মহাজোটের জয়ের সমীকরণ দেখা দিয়েছে। তবে নির্বাচনের ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতার বাইরে থাকা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ধীরে ধীরে আরো কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। যেকারণে এ জেলাতে মহাজোটের জয়ের সমীকরণ আরো জোরালো আকার ধারণ করছেন।
রোববার ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে নানা নাটকীয়তা দেখা দিয়েছে। চাপের মুখে ধানের শীষ প্রতীকের অনেক প্রার্থীরা থমকে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ হাল ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থীরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
এ জেলার ৫টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে মহাজোট জয়ে লক্ষ্যে একধাপ এগিয়ে গেছে। কারণ কোন কোন আসনে ধানের শীষ প্রতীকের এমন সব প্রার্থী দেয়া হয়েছে যা মহাজোটের প্রার্থীকে নিশ্চিত জয় এনে দিবে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ২০ দলের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জেলা সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী প্রার্থী ও সাংসদ শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বী করে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। অথচ এই কাসেমীকে বিএনপি দলের তৃণমূলের কেউ চিনেনা। এমন প্রার্থী কিভাবে শামীম ওসমানের মত হেভিওয়েট প্রার্থীর বিপক্ষে লড়বে এমন প্রশ্ন সকলের। যেকারণে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী শামীম ওসমানের জয় সুনিশ্চিত প্রায়।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলের বর্তমান সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনির। এই আসনটিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারকে বাদ দিয়ে কাজী মনিরকে প্রার্থী করা হয়েছে। এতে করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতাকর্মীরা প্রথম থেকেই ধানের শীষের প্রার্থী কাজীকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। যেকারণে কাজী মনির দাঁড়াতেই পারছেনা। যেকারণে এই আসনটিও ক্ষমতাসীনদের দখলে চলে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনে ভোটের লাড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলের শরীক দল জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বিএনপি দলটির শরীক দল নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম। আর তাই এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসামনের বিজয়ের সমীকরণে আলোর উজ্জ্বলতা ক্রমশ বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন দলের শরীক দল জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। যেকারণ এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে অনেকটা চমক দেখা গেছে এই আসনে। এই আসনে জাপার প্রার্থীর পথে একমাত্র বাধা দিয়ে আওযামীলীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার হাসনাত ছিল। কারণ মহাজোটের ভোটে স্বতন্ত্র প্রাথী কায়সারের ভোটারদের ভোট ভাগ হবে। তাছাড়া এই আসনের বিগত দিনের ইতিহাসে ভোট সমীকরণে তলানিতে রয়েছে জাতীয় পার্টি। যেকারণে জাপা প্রার্থী খোকার পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৮ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার হাসনাত জানান, ‘তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। এতে করে এই আসনটিতে এখন মহাজোটের ভোট ভাগ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই মহাজোটের প্রার্থী খোকার সামনে জয় হাতছানি দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। প্রচার প্রচারনায় অনেকটািই এগিয়ে আছে মহাজোট প্রার্থী। এতে করে এখন পর্যন্ত সমীকরণে হিসেবে মহাজোট প্রার্থী এগিয়ে আছে। তবে এ আসনটিতে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন এখনো বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা।
এ জেলার ৫টি আসনে মহাজোটের প্রার্থীরা প্রায় সবকটি আসনে জয়ের পথে এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভোটের সমীকরণের হিসেবে ক্ষমতাসীন দল মহাজোট অনেকটা এগিয়ে আছে। আর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পিছিয়ে পড়ছে। আর হামলা, মামলার জর্জরিত বিএনপি দলটি কোনভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা। এতে করে বিরোধী দলটি যখন দুর্বল হয়ে পিছিয়ে থাকছে সে হিসেবে ক্ষমতাসীন মহাজোট দলটি এমনিতে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে সমীকরণের হিসেবে মহাজোটের প্রার্থীরা প্রত্যেকটি আসনে পৃথক পৃথকভাবে জয়ের সমীকরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে করে কার্যত অর্থে ভোটের লড়াইয়ে তাদের জয়ের সমীকরণ তৈরি হয়েগেছে। এখন অপেক্ষা শুধু ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। আর সেই নির্বাচনের ভোটের লড়াইয়ে মহাজোট প্রার্থীরা জয়ের হাসি হাসতে যাচ্ছে।
