নির্বাচনী মাঠেও ব্যর্থ নারায়ণগঞ্জ বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:০৯ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। আর এই ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। দলীয় আন্দোলন সংগ্রামসহ কোন কর্মসূচিতেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে জাগানো সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র মনোনীত প্রার্থীদেরকেই মাঝে মাঝে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা মিলেছে। তাদের ছাড়া অন্য কোন নেতাকর্মীদেরকে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। এমনকি শীর্ষ পদে থাকা নেতারাও নিস্ক্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই টানা দুই মেয়াদ ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম দফা এরপর ২০১৪ সালের দশম জতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতার বাইরে থেকে যায় বিএনপি। এই দুই দফা ক্ষমতায় বাইরে থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দিন দিন একটি নিস্ক্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়। দলীয় কোন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে কর্মসূচি পালন করা তো দূরের কথা এমনকি রাজপথের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেননি তারা।
ক্ষমতার হারানোর প্রথমদিকে কিছু সময়ের জন্য রাজপথে নেতাকর্মীদের দেখা মিললেও ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পুলিশের ভয়ে রাজপথ থেকে হারিয়ে যান নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক হামলা মামলায় নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েন ঘরছাড়া। নেতাকর্মীদেরকে বেশিরভাগ সময় আদালতমুখী থাকতে হয়। গ্রেফতারের ভয়ে শীর্ষ নেতাকর্মীদের থাকতে হয় কর্মসূচির বাইরে। কর্মসূচি পালনকালে তাদের নেতাকর্মীর সংখ্যাও কমে যায়। ফলে তাদের আন্দোলন সংগ্রামও তেমন জোরদার হয়ে উঠে না।
এরই মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- দেন আদালত। এই রায়কে ঘিরেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা তেমন কোন জোড়ালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। পরবর্তীতে গত ৩০ অক্টোবর সেই সাঁজা বেড়ে ১০ বছর হওয়াতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আন্দোলন জমেনি। শুধুমাত্র নামকাওয়াস্তেই কর্মসূচি পালন করে গেছেন। তাদের দলীয় প্রধান মাসের পর মাস কারাভোগ করলেও আন্দোলন সংগ্রামে নিস্ক্রীয়ই থেকে যান নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
একই সাথে গত ১০ অক্টোবর বুধবার ২১ আগস্ট চালানো গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ- দেন আদালত। এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। এই রায়কে ঘিরে নেয়া কর্মসূচিগুলোতেও ফ্লপ মেরেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা শুধুমাত্র মুখে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আন্দোলন করে যান। বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।
এরকম পরিস্থিতি চলাকালিন অবস্থায়ই ঘনিয়ে আসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের নির্বাচনকে বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই অংশগ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় নরায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে জমিয়ত উলামা নেতা মনির হোসাইন কাসেমী এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম।
এসকল মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতিক পাওয়ার পর থেকেই সংসদীয় এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই প্রচার প্রচারণায় তারা সবসময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। এই নির্বাচনকে ঘিরেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জেগে উঠতে পারেননি। শুধুমাত্র প্রার্থীদেরকেই সংসদীয় এলাকায় মাঝে মধ্যে দেখা গেছে। তাদের সাথে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তেমন একটা দেখা যায়নি। যদিও তাদের অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে।
তবে তৃণমূল পর্যায়ের মতে, সদিচ্ছা থাকলে মামলাকে উপেক্ষা করেও প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামা যেত। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গণমানুষের কাছে পৌছাতে পারলে অবশ্যই সাড়া পাওয়া যেত। আর সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া জাগাতে পারলে এই শক্তির মাঝে অন্য কোন শক্তি ঠিকে থাকতো পারতো না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে এটা আমাদের জন্য একটা ব্যর্থতাই বলা চলে
