সন্নিকটে নির্বাচন, মাঠে নেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন ২৮ ডিসেম্বর। এরপর কোন প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। সে অনুযায়ী প্রার্থীর হাতে সময় মাত্র ৩দিন। প্রচারণার এই চূড়ান্ত পর্যায়েও নির্বাচনী মাঠে নেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
গত ৮ নভেম্বর সিইসি জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবিতে নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানো হয়। পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা। প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, হামলা, মামলাসহ নানা অজুহাতে প্রচারণায় গড়পড়তা ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের। নির্বাচনী প্রচারণার অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি।
বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকেই সেনা মোতায়েনের অপেক্ষায় ছিলেন। সেনা মোতায়েন করা হলে তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় হবেন বলেও জানিয়েছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৪০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা মোতায়েন করার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সারাদিন বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে কোন প্রচারণায় দেখা যায়নি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপির সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ্ আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া সহ অনেক শীর্ষ নেতাকেই নির্বাচনী প্রচারণার চূড়ান্ত পর্যায়ে মাঠে দেখা যায়নি। অথচ এদের সকলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেও মাঠে সক্রিয়তা নেই তাদের।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার প্রচারণার শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের পক্ষে প্রচারণায় নামার কথা বললেও এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এসএম আকরামের সাথে তৈমূর আলমের বাসায় বৈঠক হয়। তখন এই দুই প্রার্থীর পক্ষেও প্রচারণায় নামবেন বলে কথা দিয়েছিলেন তৈমূর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাকে কোন প্রচারণায় দেখা যায়নি।
পাশে থাকার কথা বলে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনও প্রচারণায় নামেন নি। মনোনয়ন না পেয়ে কোন খোঁজ খবর নেই মো. শাহ্ আলমের। দুইদিন এসএম আকরামের পক্ষে প্রচারণায় নেমে অসুস্থতার কথা বলে আর প্রচারণায় নামেননি মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম। মাঠে নেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও। গত ১৬ ডিসেম্বর কাজী মনিরের পক্ষে রূপগঞ্জে তৈমূরের সাথে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া নেমেছিলেন প্রচারণায়। এরপর আর তাঁর হদিস মেলেনি। এদিকে প্রথম কয়েকদিন আকরামের পক্ষে প্রচারণায় নেমে মামলায় জর্জরিত মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরপর দুইটি মামলার আসামী হয়েছেন এটিএম কামাল। এছাড়া বিএনপির সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরকেও দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নামতে দেখা যায়নি।
গত ২১ ডিসেম্বর বন্দরের সোনাকান্দা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জের ৫ প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু দলীয় মহাসচিবের কথার কোন তোয়াক্কাই করেননি বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী মাঠে না থাকাতে অনেকটা একা একাই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির সহযোগিতা না পেয়ে সবচেয়ে বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এসএম আকরাম ও মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। এসএম আকরাম নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে কোনমতে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও অসহায় হয়ে পড়েছেন মনির হোসাইন।
মনির হোসাইনের পাশে নেই বিএনপির নেতারা। তবে গত ২৪ ডিসেম্বর প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণায় না নামলেও পেছন থেকে সাহস ঝুগিয়ে যাচ্ছেন তাকে। এদিকে প্রেসক্লাব থেকে নামার পরই তাঁর সাথে আসা জেলা বিএনপির সহ সভাপতি পারভেজ আহমেদকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। ফলে আরো একা হয়ে পড়েছেন কাসেমী। মোটকথা শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতে মাঠ পর্যায়েও নেতাকর্মীরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। এমন অবস্থা শেষ পর্যন্ত বহাল থাকলে চরম মাশুল গুনতে হবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে। এমনটাই মনে করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
