শুক্রবার   ১৩ জুন ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ২৯ ১৪৩২   ১৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আরবের খেজুর দেশব্যাপী বিস্তারের প্রয়াসে জীবন আলী

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:১৮ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আলী তাবু ফকিরের ছেলে জীবন আলী। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদি আরবের আল-মাসানায় খেজুরের বাগানে কাজ করার সুবাদে বাংলাদেশে খেজুর বাগান করার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাই সৌদি আরবের খেজুর গাছ বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ৫০ বছর বয়সী জীবন আলী বহু দিন প্রবাস জীবন শেষে এখন জীবন কাটাচ্ছেন নিজ গ্রামে।

 

দীর্ঘ দিন খেজুর গাছের বাগানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এখন দেশে এসে নিজ গ্রামে আপন হাতে গড়ে তুলছেন আরব দেশের খেজুর গাছের নার্সারি। পরম যতেœ পরিচর্যা করে চলছেন দিনের পর পর। ৩ সন্তানের জনক জীবন আলী প্রবাসে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেন নি।  তাই সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে  ফলাতে চান সৌদি আরবের খেজুর। তাই তিনি গড়ে তুলেছেন খেজুর গাছের বাগান।

 

বৃক্ষপ্রেমী জীবন আলী বলেন, সৌদি আরবে কাজ করার সময়ই আমি পরিকল্পনা করেছিলাম দেশে একটি খেজুর গাছের নার্সারি করবো। যেহেতু খেজুর বাগানে কাজ করেছি সেহেতু খেজুর বাগানের পরিচর্যা সম্পর্কে আমার সব কিছুই জানা ছিল। আমি সৌদি থেকে খেজুরের বীজ নিয়ে দেশে এসে নার্সারির কাজ শুরু করি।

বর্তমানে আমার লাগানো বীজগুলো থেকে জন্মানো চারাগুলোর বয়স চার বছর। অন্তত দশ বছর বয়স হলে খেজুর গাছে ফলন শুরু হবে।

 

জীবন আলীর খেজুর গাছের নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, জীবন আলী খেজুর গাছের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত। তার নার্সারিতে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশী বিভিন্ন জাতের খেজুর গাছের চারা রয়েছে। প্রতিটি চারার মূল্য  ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। মরিয়ম, এখলাস, শুক্কারী, ডেকলেট নূর ও আল-খুদরীসহ বিভিন্ন জাতের খেজুরের চারা পাওয়া যায় তার নার্সারিতে। জীবন আলী শুধু একজন বৃক্ষপ্রেমীই নয় তিনি সংস্কৃতিমনা একজন মানুষও বটে। আপন খেয়ালে নিজে নিজেই তিনি গান রচনা করে নিজেই সুর তুলে গান গায়। ঘরে একতারা, দোতারা, বাঁশী ও হারমোনিয়াম সবই আছে।

 

 

 

জীবন আলী জানান, খেজুর গাছ বিক্রির উপযুক্ত করতেই কমপক্ষে ৩/৪ বছর লেগে যায়। আর ফলনের জন্য লাগে ১০বছর। নার্সারিতে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সী খেজুরের চারা গাছ রয়েছে। খেজুর গাছ চাষের মাধ্যমে  দেশে খেজুরের আমদানী নির্ভরতা কমবে বলে তিনি মনে করেন।

 

দশ বছর আগে সৌদি থেকে ছুটিতে এসে কাজিরগাঁও কবরস্থানে কয়েকটি বীজ রোপণ করেছিলাম ,আজ সে গাছে ফলন এসেছে। তিনি বলেন, খেজুর বাগান করা একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এছাড়া খরচও অনেক বেশী। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগীতা  পেলে বাংলাদেশে আরবের খেজুর ছড়িয়ে দেয়া যাবে। 

 

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসার মনিকা আক্তার বলেন, এবছর জীবন আলী তার খেজুরের চারা নিয়ে উপজেলা বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছিলো, এখানে বেশ কিছু খেজুর চারা বিক্রিও হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরবের খেজুর গাছের নার্সারি নেই বললেই চলে, জীবন আলীর এ উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। আমরা তার নার্সারির খোঁজ-খবর নিচ্ছি। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগীতা করা হবে।