সন্ত্রাসী ও মাদকব্যবসায়ীদের অঙ্গসংগঠন গুলোর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

নারায়ণগঞ্জ মানেই যেন এক সময় ছিলো একটি আতঙ্কের স্থান। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি মাদক এগুলো যেন গোটা নারায়ণগঞ্জকে তাদের কালো চাদরে ঘিরে ফেলেছিলো।
এবং নারায়ণগঞ্জের এসব নেতিবাচক সংবাদ দেশের সব সংবাদপত্রেই বেশ ফলাও করে প্রকাশ পাচ্ছিল। কিন্তু এই চিত্র এখন আর নেই, বর্তমানে পুলিশের লাগাতার চলমান বিশেষ অভিযানে অপরাধীদের গ্রেপ্তার সংবাদ ছাপিয়ে এখন বড় খবর হচ্ছে পেশাদার রাঘববোয়ালদের পালানো সংশ্লিষ্ট বিষয়। মানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের ভয়াবহতম প্রতিক্রিয়ায় বাধ্য হয়েই গা ঢাকা দিচ্ছে মাদকের ডন, গডফাদার, সম্রাটবেশি হোতারা।
শীর্ষ অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরার নাজেহাল পরিস্থিতি তাদেরকে বাধ্য করছে বাড়ি ছেড়ে পালাতে। চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আর মাদকের অবৈধ অর্থে গড়ে তোলা বিলাসবহুল বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে একসময়ের দুর্দান্ত পেশাদার অপরাধী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী রাঘববোয়াল শ্রেণিভুক্ত মানুষগুলো যদি পালিয়ে যাচ্ছে আর কতক গ্রেপ্তারে জেলায় এসব অপরাধের ভয়াবহতা কমে আসছে। যাদের হাত ধরে জেলাব্যাপী এসব অপরাধ ছড়িয়ে পড়ছে তাদের পালানোর পথ বন্ধ করে সম্রাট বেশী ওই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে আইন আদালতের মুখোমুখী দাঁড় করানোয় সেসব অপরাধীদের সাঙ্গপাঙ্গরাও পালাচ্ছে। আর নির্যাতনের শিকার ও নানাভাবে আক্রান্ত ব্যাক্তিরাও অপরাধীদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মুখ খুলছে।
জানা গেছে, বন্দর থানার ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি মামলায় ১৮ এপ্রিল দুপুর আড়াইটায় সদর উপজেলার পাইকপাড়া এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিসবাবু। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একসময় নিজেকে সম্রাট মনে করা ডিসবাবুর এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে বেপরোয়া হয়ে ওঠা তার সাঙ্গপাঙ্গরাও এলাকা ছেড়েছে।
২০ এপ্রিল ফতুল্লা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে র্যাব, পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুসহ ২৩ জন গ্রেপ্তার হয়। এ সময় চুন্নুর কাছ থেকে ৫ শতাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপরপরই চুন্নুর কথায় যেসব সন্ত্রাসী উঠবস করতো তারা লাপাত্তা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
চলতি মাসে ২২ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল জেলায় ২৪ ঘন্টার মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ২০ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। এই অভিযানের পর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা গা ঢাকা দিয়েছে।
কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি শাহ আলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে গ্রেপ্তার, নগরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিআইডাব্লিউটিএ এলাকায় জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে ৪১ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার এবং তাদের স্বীকারোক্তিতে জুয়াড়ি স্থানীয় জনৈক সাংবাদিক রাজু আহম্মেদের নাম আসা, ১১ মার্চ ফতুল্লার লঞ্চঘাট এলাকায় চোরাই জ্বালানি তেলের আস্তানায় পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানিসহ মূল হোতা ইকবাল হোসেন তিনজনকে গ্রেপ্তার, গত ২৭ মার্চ ফতুল্লার জামতলা এলাকায় জনৈক ভিকিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল গাফফার খানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজহারভুক্ত আসামি জাহিদুলকে গ্রেপ্তার এবং গত ১ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত মেরি অ্যান্ডারশনে ভাসমান জাহাজে পুলিশের অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার পুরো জেলায় অপরাধীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ আসতে পারে এমন ব্যক্তিরাও গা ঢাকা দিয়েছে। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের সটকে পড়তে বলে দিয়েছেন তারা।
দুর্ধর্ষ অনেক অপরাধীরা গ্রেপ্তার এড়াতে নানাবাহানায় দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। মাদকডনরা বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতেই হয়তো নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং মাদকের বিরুদ্ধে চলমান শক্ত অভিযান ভাটা পড়লেই আবার স্বমহিমায় জেগে উঠবে এই পলাতক গডফাদারেরা। তারা ফের পুরোদমে সক্রিয় হবে এই অবৈধ পেশায়। একটু সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে গ্রেপ্তার না হওয়া ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীরা। বর্তমান স্থবির হওয়া পুরোনো পেশা নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ চেষ্টায় ব্রতি হবেন এই আশায় বুক বেধেছেন তারা।
অনৈতিক অর্থবিত্তে প্রতিষ্ঠিত সুরম্য অট্টালিকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসে চালিয়ে যাবে অতীতের অশনি কার্যক্রম। অল্পতেই অধিক অর্থ, এমন লোভ দেখিয়ে দলে ভিড়াবে শত শত বেকার যুবক। তাদের হাতে মাদক তুলে দিয়ে আস্তে আস্তে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে মাদক অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে দেশবিধ্বংসী ওই নীতিভ্রষ্ঠরা। যারা জেলার আনাচে কানাচে মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার প্রধান কাজ সম্পাদন করে আসছে তারা কেন ধরাছোঁয়ার বাইওে থেকে এভাবে পর্দার অন্তরালে চলে যাওয়ার সুযোগ পাবে এমন প্রশ্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।
তবে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন নারায়ণগঞ্জে যেভাবে অপরাধীদের মূল উৎপাটন চলছে এমনটি আরো আগে থেকেই প্রয়োজন ছিলো। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এখন সুপার হিরো। তাঁর জিরো টলারেন্স নীতিই মাত্র কয়েকমাসে নারায়ণগঞ্জকে সারাদেশে ভিন্নভাবে পরিচয় করাচ্ছে। অপরাধীদের জন্য এমন শক্ত দাওয়াই জরুরী হয়ে পড়েছিলো।
পুলিশের বর্তমান যেসব অভিযান চালানো হচ্ছে তা নারাযণগঞ্জের মানুষ ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন। আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জবাসী পুলিশ সুপারের কাছে সাধারণ মানুষ দাবি জানিয়েছেন, ছোট বড় যেকোনো মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসী কেউ যেন কোনো ধরনের অনুকম্পা না পায়। যে যত বড় ক্ষমতাশালীই হোক না কেন তাকে তার অপরাধ অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনতে পারলেই নারায়ণগঞ্জ শান্তি ও স্বস্তির নারায়ণগঞ্জে পরিণত হবে। তবেই জেলা পুলিশের এসব অভিযানের চূড়ান্ত সফলতা আসবে বলে মনে করেন তারা।