মঙ্গলবার   ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৪ ১৪৩২   ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নানোৎসব, পূণ্যার্থীদের ঢল

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১২ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা লাঙ্গলবন্দে আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুক্রবার শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানোৎসব। উৎসব মুখর পরিবেশে অষ্টমী স্নানোৎসবে পূণ্যার্থীদের ঢল নামে। দুই দিন ব্যাপী স্নানোৎসবের প্রথম দিনে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১১ টা ৪৮ সেকেন্ডে স্নানের লগ্ন শুরু হয়। তিথি অনুয়াযী শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৮ টা ৫৮ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে লগ্ন শেষ হবে। সেই সাথে সমাপ্তি ঘটবে দুই দিন ব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসবের ।

১৮টি স্নানঘাটে দল বেধে,স্বপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী  স্নানে অংশ নিচ্ছেন তারা। তীর্থকেন্দ্র এবং স্নানঘাট গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে স্নানার্থীদের সমাগম ছিল চোখের পড়ার মত।

জগতের যাবতীয় সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতার আবরণে ঘেরা জীবন থেকে পাপ মুক্তির বাসনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে আসেন। "হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, ”হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর" ; এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় লাখ লাখ পূণ্যার্থী আদি ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে অংশ নেন। 

এ সময় স্নানমন্ত্র পাঠ করে নিজ নিজ বাসনা অনুযায়ী ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা , হরিতকি, ডাব ও আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে তর্পণ করেন পূণ্যার্থীরা।

স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে লাঙ্গলবন্দকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে । নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্নানার্থীদের। তীর্থস্থান থেকে বেশকিছু দুরে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় পায়ে হেঁটে পূর্ণ্যাথীদের স্নান ঘাটে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় পড়ছেন বৃদ্ধরা।

তবে লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের নেতা শিখন সরকার শিপন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রচুর স্নানার্থী আসছে, তাতে কিছুটা দুর্ভোগ মেনে নিতেই হবে। ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিচ্ছেন বলে স্নান উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা তীর্থযাত্রী দিপক কুমার (৫৫) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি প্রতি বছর স্নানোৎসবে অংশ নেন। তিনি নদী পথে ট্রলার নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে সপরিবারে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন বলে জানান।

কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে আসা তীর্থযাত্রী গীতারানী (৫৫) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি প্রতি বছর স্নানোৎসবে অংশ নেন। এবার তিনি একা আসেননি, নদী পথে ট্রলার নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে সপরিবারে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন। 

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে চলছে স্নানোৎসব। বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, অষ্টমী স্নানকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের দেড় সহস্রাধিক সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওায়ার ও নিরাপত্তা চেকপোস্ট। সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে তীর্থস্থানের ৩ কিলোমিটার এলাকা। ২টি অস্থায়ী হাসপাতালসহ বেশ কটি মেডিক্যাল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে। 

কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, পূন্যার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম ,১ নং ঢাকেশ্বরী টিন লাইন ও বনগুন মিলন সংঘ, নিপসম, সেবা সংঘ, হিন্দু কল্যাণ পরিষদসহ অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দর্শনাথীদের খাবার সরবরাহ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করছে। অষ্টমী স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ ফুটে উঠেছে।

বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা একেএম সেলিম ওসমান। সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা , সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ , নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ রশিদ প্রমুখ।