মঙ্গলবার   ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৪ ১৪৩২   ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শীতলক্ষ্যা বাঁচাতে ইটিপি’র বিকল্প নেই

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:১১ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার

শীতলক্ষ্যা বাঁচাতে ইটিপি’র বিকল্প নেই বলে মনে করেন আলোচকবৃন্দ। তাঁদের মতে, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে যে খাল দিয়ে বর্জ্য নির্গত হয় সেই খালের মাথায় সেন্ট্রাল ইটিপি বা কেন্দ্রীয় তরলবর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করতে পারলে সশীতলক্ষ্যাকে বাঁচানো যাবে।

ছোট বড় শিল্প কারখানার মালিকরা তাদের কাজের পরিধি অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ দেবেন। ফলে কোন কারখানায় ইটিপি  আছে কি নেই তা খোঁজার প্রয়োজন পড়বে না। রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে  অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আলোচকবৃন্দ এমন ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেন। 

সাংবাদিক ইউসুফ আলী এটমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আলোচক ছিলেন,বিকেএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি  মোহাম্মদ হাতেম, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ এবং জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারিক বাবু।

উল্লেখ্য,শীতলক্ষ্যার উৎপত্তি পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে। গাজীপুর জেলার টোক নামক স্থানে পুরানো ব্রহ্মপুত্র দু’টো ধারায় বিভক্ত হয়ে একটি ধারা বানার নামে দক্ষিণ-পশ্চিম  দিকে প্রবাহিত হয়ে লাকপুরে এসে শীতলক্ষ্যা নাম ধারণ করে। 

এরপর ঢাকা জেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারয়ণগঞ্জের কলাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরী নদীতে মিশেছে। শীতলক্ষ্যার কারণেই প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ।

একসময় শীতলক্ষ্যার পানি খুবই স্বচ্ছ ও শীতল ছিলো। ওইসময় এই পানি বোতলজাত করে বিদেশে রপ্তানী করা হতো। কিন্তু আজ শীতলক্ষ্যা দেশের দ্বিতীয় দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর শীতলক্ষ্যাকে মৃত নদী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বলেছে এই নদীর পানিতে সহনীয় মাত্রায় অক্সিজেন না থাকায় এটি জলজ প্রাণীর জন্য উপযোগী নয়। ফলে  এই নদীতে মাছ নেই এমনকি এর পানি গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে।   

আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়নগঞ্জের বড় বড় কম্পোজিট নীট ফ্যাক্টরী ও শিল্পকারখানায় ইটিপি চালু আছে। কিন্তু এতে আশানুরূপ ফল  আসছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। ডিএনডি এলাকায় ছোট বড় প্রায় দুই থেকে আড়াইশ ডাইং ফ্যাক্টরী রয়েছে যার বেশির ভাগেই  ইটিপি নেই। আর থাকলেও চালানোর মানসিকতা নেই। 

এগুলো কন্ট্রোল করার মতো কেউ আছেন বলেও মনে হয় না। এসব ফ্যাক্টরী স্থানীয় কাপড় ডাইং করে বর্জ্য সরাসরি খালে ছেড়ে দেয়। খরচ বেশী পড়ে বলে কেউ ইটিপি স্থাপন করতে চান না। সুতরাং নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে হলে ‘সেন্ট্রাল ইটিপি’ স্থাপন করতে হবে। 

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এর চাইতে ভালো প্রস্তাব আর নেই। আর সরকার ইচ্ছে করলেই তা বাস্তবায়ন করতে পারেন। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর ব্যবসায়ীদের আস্থা নেই। অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে ‘সিস্টেম’ না থাকলে তারা নানা সমস্যার কথা বলে তৈরি ব্যবসায়ীদের আটকিয়ে রেখে জরিমানা আদায় করে। 

শুধু ৩০/৪০ লাখ নয় কারো কারো কাছ থেকে কোটি টাকাও আদায় করেছে এমন নজিরও আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ পর্যন্ত যতো টাকা জরিমানা আদায় করেছে তা দিয়ে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপন করা যেতো। পরিবেশ দপ্তরের পরিবেশ ঠিক করতে জনসচেনতা সৃষ্টি করতে হবে।

শরীফ উদ্দিন সবুজ বলেন,সরকারি এবং সেরকারিভাবেও শীতলক্ষ্যায় অবৈধ দখল চলছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,ডকইয়ার্ড, এবং সিমেন্ট ফ্যাক্টরী নদীর উপর জেটি তৈরী করে  মালামাল লোড আনলোড করছে। বরফ কলের কাছে ‘চৌরঙ্গী পার্ক’ শীতলক্ষ্যার প্রায় ৬ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে পার্কের ব্যবসা করছে। 

তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এরা বৈধতা পায় কি করে? নদী ড্রেজিং করতে গেলে কাটার কাজ করে না। নদীর তলদেশে জমানো পলিথিনে কাটার আটকে যায়। ওয়ান- ইলেভেনের সময় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ইটিপি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো যা সবাই সমর্থন করেছিলো। তিনি বলেন,জোর করে ইটিপি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

তরিক বাবু বলেন, আইন বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। শুধু মুখে মুখে বললে আইন বাস্তবায়ন হবে না। আমরা পরিবেশ আন্দোলনের নেতাকর্মীরা  সময় ও সুযোগ পেলেই মানুষকে সচতন করার কাজ করছি। আমরা নিজেরা  পলিথিন ব্যাগে বাজারের সওদা নেই না। আশা করবো, আগের মতো  আমরা ডুলা হাতে বাজারে যাবো। মানববন্ধন ,র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জেলা পরিবেশ আনোদালনের নেতা কর্মীরা শীঘ্রই মাঠে নামবো।