শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১   ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আহত বাংলাদেশির মুখে ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভয়াবহতা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৯ বুধবার

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে গেল ১৫ মার্চ শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে আল নুর মসজিদে। হামলার সময় মসজিদের ভেতরেই ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক ওমর জাহিদ। হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ওমর জাহিদও। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন হামলার মুহূর্তের ভয়াবহতা কেমন ছিল।

ওমর জাহিদ বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। মুসলিম হিসেবে প্রতি শুক্রবারেই জুমার নামাজ পড়তে আমরা মসজিদে যাই। দুপুর সাড়ে ১২টায় আমার কাজ শেষ করে নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেই। ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজ শুরু হয় দুপুর ২টায়। খুতবা শুরু হয় তার আধঘণ্টা আগে, দুপুর দেড়টায়। ওই দিন আমি একটু আগে গেছি, যাতে খুতবা শুনতে পারি। এজন্য বাসা থেকে বের হই পৌনে একটা বা ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে। আমার নিজের গাড়ি চালিয়ে মসজিদে পৌঁছাই ১টা ১০ মিনিটের দিকে।

 

তিনি বলেন, এরপর মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি। এরপর দ্বিতীয় সারিতে গিয়ে বসি, ঠিক মুয়াজ্জিনের পেছনে। দেড়টার দিকে ইমাম সাহেব প্রবেশ করে তার স্থানে গিয়ে সালাম দিয়ে কেবল দুই একটা কথা বলতে শুরু করেছেন। এমন সময় আমরা বাইরে থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম আতশবাজি বা বৈদ্যুতিক কোনো শর্টসার্কিট হয়েছে। একটু পরেই দেখতে পাই পেছনের মানুষজন দৌড়াদৌড়ি করছে, চিৎকার করছে। তখন আমাদের মনে হলো যে খারাপ কিছু হয়তো ঘটছে। কিন্তু গোলাগুলি হচ্ছে কিনা, সেটা তখনো আমি ঠিকভাবে বুঝতে পারিনি।

ওমর জাহিদ বলেন, তখন আমি ডান পাশে গিয়ে একেবারে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার সঙ্গে অন্য যারা ছিলেন, তারাও শুয়ে পড়লেন, তবে কয়েকজন হয়তো বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ হয়তো বেঁচে গেছেন। তবে সেই দিন অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি আসলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। কারণ আমার ডানপাশে যিনি ছিলেন, তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তিনি মারা গেছেন কি না জানি না। আমার পায়ের কাছে ছিল একটি সোমালিয়ান বাচ্চা, সে মারা গেছে। বাম পাশেও একজন ছিলেন, তিনিও মারা গেছেন কি না নিশ্চিত নই।

 

‘যখন গুলি করা হচ্ছিল, তখন আমার বাম কাঁধে একটি গুলি লাগে। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে, আমি হয়তো মারা যাচ্ছি বা মারা যাবো’ বলছিলেন ওমর জাহিদ।

তিনি বলেন, প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মতো গুলি করা হয়েছে, সঠিক সময়টা আমার মনে নেই। পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ।
এই বাংলাদেশি বলেন, আমি জানি না কিভাবে আমি বেঁচে ফিরে আসলাম। কারণ ভিডিওতে পরে আমি দেখেছি, আমার দিকে সে তিন-চারবার গুলি করেছে। আসলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি।

তিনি বলেন, আসিফ নামের ওই বন্ধুকে আমি ডাকলে তিনি এসে আমাকে পরীক্ষা করে বলেন, বুলেট আমার শরীরের ভেতরে যায়নি, শুধুমাত্র একটু স্পর্শ করে গেছে, একটু জখম হয়েছে।

‘আমি উঠে পাশের যে মুরুব্বি শুয়ে ছিলেন, তাকে জাগানোর চেষ্টা করলাম। তাকে আমি চিনি, কিন্তু নাম জানি না। তবে তিনি কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না। আমি ভাবলাম তিনি হয়তো মারা গেছেন।’

 

ওমর জাহিদ বলেন, এরপরে আমি যখন পেছনে তাকায়, দেখলাম তা দেখে আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তিন থেকে চার বছরের যে ছেলেটাকে একটু আগেই কোরআন শরিফ পড়ে রাখতে দেখেছি, সে হয়তো একজন হাফেজ, তাকে দেখি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, মুখে গুলির আঘাতের চিহ্ন।

এরপর পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ডের মতো মসজিদে ছিলেন ওমর জাহিদ। পেছনের এলাকা অর্থাৎ পার্কিং এলাকা থেকে দেয়াল টপকে একটি বাসায় আশ্রয় নেন। পরের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা তাকে ওই বাড়িতেই থাকতে হয়।

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদসহ দুটি মসজিদে ব্রেনটন ট্যারেন্ট নামের এক শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টানের গুলিতে কয়েকজন বাংলাদেশিসহ কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হন। আহত হন আরো ৪৯ জন যাদের ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ক্রাইস্টচার্চের ডিন্স অ্যাভিনিউর আল নুর মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী লিনউডের মসজিদে হামলা চালায় ব্রেনটন ট্যারেন্ট নামের শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান সন্ত্রাসী। স্ট্রিকল্যান্ড স্ট্রিটে একটি গাড়িবোমা হামলার চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে।

ক্রাইস্টচার্চে হেগলি ওভাল মাঠের খুব কাছের আল নুর মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর বন্দুক হামলার ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা। তখন তাদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না।