শনিবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৩ ১৪৩২   ০৭ রজব ১৪৪৭

আত্মশক্তি অর্জন করতে হবে নারীদের

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৫৭ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

মহিলা পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম বলেছেন, নারীর প্রতি সমান অধিকার, সহিংসতা নির্যাতন বন্ধ, নারী ও কন্যাশিশুরাও মানুষ- কথাগুলো শুধু স্লোগানে সীমাবব্ধ রাখলে চলবে না, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে আলোচনার পাশাপাশি নারী ও কন্যাশিশুর অধিকারের বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ, নারীর অধিকার বিষয়টি একদিন, ৬ মাস কিংবা এক বছরের ব্যাপার নয়।

শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার।

আয়েশা খানম বলেন, কোথায় নেই নারীরা। নারীরা সরকার চালাচ্ছে, রয়েছে বিচারবিভাগে, সেনাবাহিনীতে, বিমানবাহিনীতে, পুলিশে, ব্যবসায় সব জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ। পোশাকশিল্পে তো নারীরাই এগিয়ে। এদিকে বাংলার গ্রামীণ নারীরা তো একেক জন লড়াকু সৈনিক। তারা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেন, নারী আন্দোলন শুধু নারীর জন্য আন্দোলন নয়, মানুষের জন্য আন্দোলন। এটা জাতীয়, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরই নাম।

তিনি আরো বলেন, ইতিবাচক চিত্রের পাশাপাশি অনেক নেতিবাচক চিত্রও আমাদের মানচিত্রে আছে। যদিও ভাবতে চাই সমতার কথা। তবে বাংলাদেশের নারী ও শিশুদের উপর যে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও সহিংসতা হচ্ছে তা মানা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে পেছন থেকে নারীর জামা কেটে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী।

আয়েশা খানম বলেন, আমরা গবেষণা করে ভয়াবহ চিত্র পেয়েছি। সহিংসতা বন্ধে ভয়াবহতার চিত্র তুলে এনেছি। বাল্যবিবাহ বন্ধে যে আইন হয়েছে সেটা আরও বেশি শক্তিশালী হওয়া উচিত। নরসিংদী রায়পুরার মতো দেশের অনেক স্থানে নারী নিজেরাই বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করছেন।

শিশু সনদ, কন্যাশিশুর অধিকার শীর্ষক ঘোষণা দিয়েছিল জাতিসংঘ। সেখানে আমাদের অর্জন কতটুকু তা মূল্যায়নের সময় এসেছে। পরিবর্তনের দিন এসেছে। শুধু পথের কাটা সরাতে হবে। সেজন্য প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়ার জীবনীতে উজ্জীবিত হবার আহ্বান জানান তিনি।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আমাদের জন্ম হয় মানুষ হিসেবে। এরপর লিঙ্গ ভেদ করা হয়। প্রত্যেকটি মেয়েরই নিজেকে মানুষ মনে করা উচিৎ। আর ছেলেরা সহপাঠি মেয়ে, বোনকে মানুষ ভাববে। তাহলে সহজ হয়ে যাবে অনেক কিছু।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রজীবনে আমি ছাত্র ইউনিয়ন করেছি। অধিকার আদায়ে, গণতন্ত্রের জন্য প্রায় দিনই মিছিল করেছি, শহীদ মিনারে জমায়েত হয়েছি। ঐতিহাসিক আমতলায় আমি একটি অনুষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলন সমর্থন করে আমি বক্তব্য দিয়েছিলাম। দেশকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজ করেছি। আমরা হয়তো স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু হারিয়েছি অনেক মেধাবীকে।

নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে হবে। কারোর আশায় বসে থাকলে চলবে না। প্রত্যেক মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে। সাদা চোখে কোনো মানুষকে বিশ্বাস করলে চলবে না। যখন-তখন নারীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অসম্মান করা বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক দেশ, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের বলে উল্লেখ করেন নাসিমুন আরা।

টেলিভিশন নিউজ২৪ এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নি বলেন, কন্যাশিশু আর ছেলেশিশুর বড় হয়ে উঠা এক না। আমি হয়তো পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি পেরিয়েছি। কিন্তু সব পরিবারে এটা হতে দেখা যায় না। অনেক মেয়ে অনেক প্রতিভাবান, কিন্তু ভাইকে পড়াতে গিয়ে তার নিজের মেধাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়।

তিনি বলেন, আমার সামনেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। বেগম রোকেয়ার জীবনী ও সুফিয়া কামালের লেখা আমি পড়েছি। পাবলিক বাসে চড়ে কলেজে ক্লাস করেছি দুই বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে পরিবার থেকে বিএ তে ভর্তি হতে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। সাংবাদিকতা পড়ব সেখানেও বাধা। বাধ্য হয়ে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হই। তবে একটি পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। লেখা প্রকাশের পর বাবা খুশি হয়েছিলেন। নিজের চেষ্টা থাকলে কোনো বাধা আর বাধা থাকে না। সেই চেষ্টা আত্মশক্তি অর্জন করতে হবে সবাইকে।

অনুষ্ঠানে গুণী নারী হিসেবে নাসিমুন আরা হক মিনু, আয়েশা খানম এবং শাহনাজ মুন্নিকে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী মৈত্রীর নেত্রী ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহিন আক্তার ডলি।