শুক্রবার   ২১ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩২   ৩০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

নৌকার প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা নেত্রকোনার সিদ্দিক মিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৩১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

সিদ্দিক মিয়া নৌকা–ভ্যানে করে তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে এখন নৌকার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল নেত্রকোনার মোক্তারপাড়া এলাকার মগড়া নদীর সেতুর ওপরে। 
আওয়ামী লীগের যেকোনো সভা-সমাবেশ, সম্মেলন এলেই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে ছোট দুই ছেলেকে নৌকা–ভ্যানে নিয়ে হাজির হন সিদ্দিক মিয়া। আর এখন তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই তো দম ফেলার ফুরসত নেই সিদ্দিক মিয়ার। তিনি এখন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচারণা নিয়ে মহাব্যস্ত।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় মগড়া নদীর ওপর সেতুতে দেখা যায়। ওই দিন তিনি নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন।

সিদ্দিক মিয়া নৌকা–ভ্যানের মাঝখানে বসে নৌকাসদৃশ যানটি চালাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর সামনে ও পেছনে বসে আছে তাঁর ছোট দুই ছেলে। তাদের হাতে বইঠা। পরনে সবার মুজিব কোট। নৌকার পাশে বাঁধা লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়ছে। মাইকে বাজছে ‘প্রগতির নৌকা, স্বাধীনতার নৌকা, উন্নয়নের নৌকা শেখ হাসিনার নৌকা’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান, স্বাধীনতা ও জাগরণের গান। তাঁর এই কাণ্ড দেখে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন। একটু থামিয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব সিদ্দিক মিয়ার সঙ্গে। আপনি কেন এমন করে প্রচারে নামলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজান, আপনি কী করেন।’ উত্তর দিলে তিনি হেসে বলেন, ‘তবে তো জানার কথা।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘এটা আমার নতুন নয়। আমাকে বলতে পারেন, আমি বঙ্গবন্ধুপাগল এবং বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও নৌকাপাগল মানুষ। আমার এই চারটি ভালোবাসা বুকে নিয়ে মরতে চাই।’

সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধু যখন নেত্রকোনা কলেজ মাঠে এসেছিলেন, তখন তিনি সেই সমাবেশ দেখতে বাড়ি থেকে এসেছিলেন। ওই সমাবেশে প্রচুর লোকজন যোগ দিয়েছিল। তখন কলেজের ছাদ ধসে পড়ে। লোকজনের দৌড়াদৌড়ি ও ভিড়ে তিনি নিচে পড়ে গিয়ে মাথায়ও আঘাত পান। পরে বিষয়টি বঙ্গবন্ধু জেনে তাঁকে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। এ থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রেম তাঁর।

সিদ্দিকের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর এলাকায়। সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলেদের নাম সাকিব মিয়া (৯) ও আশিক মিয়া (৭)। তারা 
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। সাকিব ও আশিক বলে, তারা তাদের বাবার সঙ্গে এমন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা–ভ্যান নিয়ে প্রচারণা করে ঘুরতে বেশ আনন্দ পায়। মানুষও তাদের বাবাকে ভালোবাসে। তাদের আদর করে চকলেট–বিস্কুট দেয়।

সিদ্দিকের এই নৌকাটি বানাতে সব মিলিয়ে এখন তাঁর খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজারের মতো। তিনি বছর তিনেক আগে নেত্রকোনার এক মিস্ত্রিকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে স্টিলের নৌকাটি বানিয়েছেন।

এরপর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনসহ যেখানেই নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হয়, সেখানেই তাঁর নৌকা–ভ্যান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্দিক। তিনি নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট সিটি নির্বাচন ও ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকা–ভ্যান নিয়ে হাজির হয়ে আলোচনায় আসেন।