প্রতিহিংসা নয়, ঐক্যে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ: প্রধানমন্ত্রী
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ৭ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্যে বিশ্বাসী। এ জন্য আমরা বিভিন্ন সময় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় এমপি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরক্ষরতার অভিশাপ মুক্ত বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এ জন্য আমি দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চাই।
লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে দেশের সব নাগরিক সমান। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সবসময়ই জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির উপর আস্থাশীল। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সব নাগরিকের অংশগ্রহণ জরুরি।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মতের ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলকে নিঃশেষ করার অপচেষ্টা হচ্ছে বিস্ময়কর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ এবং এর দলের নেতা-কর্মীগণ এ ধরণের বৈরী আচরণের শিকার হয়েছেন বার বার।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরদিন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সমর্থকগণ চরম নির্যাতনের মুখোমুখী হয়েছিলেন।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবেও বারবার হামলার শিকার হয়েছি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। সেদিন মোট ২৪ জন নিহত এবং ৫ শতাধিক মানুষ আহত হন। যারা বেঁচে আছেন শরীরে স্পিন্টার নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন।’
সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। ৪২ বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় থাকার পর গত বছরের ১৭ মার্চ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এ উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দেশের অগ্রগযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতিতে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আবার দেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১০ বছর ধরে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। যে কারণে বাংলাদেশের এ উন্নয়ন এবং অদম্য অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আশি’র দশকের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুততম সময়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়নে আমাদের সরকারের সক্ষমতা এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দুঃখী ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এম এ মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামলীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন বিদ্যূৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্যাপটিভসহ ২০হাজাার ৮৫৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশের শতকরা ৯৩ভাগ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে এবং শতকরা ৭ভাগ গ্রাহক অবশিষ্ট আছে। অবশিষ্ট গ্রাহকদেরকে ২০১৯-২০ সালের মধ্যেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
