প্রকৃতির যত রূপ, সাজেক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:২৫ এএম, ২ মার্চ ২০১৯ শনিবার

রাস্তার দুইপাশে হাঁটার পথ। স্থাপনাগুলোতে টকটকে লাল টিনের ব্যাবহার দারুণ ফুটেছে। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মধ্যে হলেও আপনি চাইলে খাগড়াছড়ি দিয়ে যেতে পারেন। সারা গায়ে বাতাসের মতো মেঘ মাখতে চাইলে। অথবা আপনার থেকেও অনেক ফুট নিচে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনই দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে বাংলাদেশের মধ্যে আপনাকে সাজেক যেতে হবে। বেশ গুছানো যায়গা। চমৎকার পিচঢালা রাস্তা। একটাই রাস্তা, একটার পর একটা সব পেয়ে যাবেন। হাটতে হাটতে এগিয়ে গেলে, সব কিছুই ভালোভাবে দেখতে দেখতে যেতে পারবেন।
স্টোন গার্ডেন : হাঁটাতে ইচ্ছা না করলে স্টোন গার্ডেনেই নেমে পড়ুন। সাজেকের মূল গেট দিয়ে ঢুকে কিছুদুর গেলেই আপনার দৃষ্টি কাড়বে দি স্টোন গার্ডেন। পাথুরে পাহাড় সাজিয়ে গুছিয়ে বেশ নান্দনিক করা হয়েছে। খুব বড় যায়গা নয়। প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা; একটু বেশিই। ছায়ার নিচে দোলনাই দুলতে-দুলতে বা গার্ডেন চেয়ারে বসে সময় কাটাতে বেশ লাগে। সামনে বিস্তীর্ণ দিগন্ত- সবুজ আর সবুজ। সাজেক রিসোর্টে সিট না পেলে এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখাতে পারেন।
সাজেক রিসোর্ট : স্টোন গার্ডেন আর সাজেক রিসোর্ট একদম পাশাপাশি। আমি মনে করি সাজেকে কেউ ঘুরতে গেলে এবং সামর্থ্য থাকলে সাজেক রিসোর্টেই থাকা উচিৎ। দারুণ আরবান সুবিধা ও পশ্চিম দিকে সংযুক্ত টেরাস থাকায় এখানে থাকাটাকে আনন্দময় করে তুলছে। সূর্য অস্ত দেখতে এর চেয়ে ভালো যায়গা পুরো উপতক্যাতে আর নেই।
সাজেকের সবচে নিরাপদ ও আরামদায়ক যায়গা। রুম ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে স্বল্পকালীন সময় থাকার সুবিধা আছে। আগে থেকে যোগাযোগ করলে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় আদিবাসীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে দেন। রিসোর্টটি বেশ খরুচে ও একইসাথে বেশ আরামদায়ক ব্যাবস্থা।
রুইলুই পাড়া : ত্রিপুরা ভাষায় রুই মানে কোষাগার আর লুই মানে পূর্ণ, রুইলুই মানে পূর্ণ কোষাগার। এপাড়ায় মুলত ত্রিপুরা ও লুসাই নৃ-গোষ্ঠীর অধিবাস। এখানে থাকার যায়গার অভাব নেই। জনপ্রতি সুযোগ- সুবিধা অনুসারে ১০০ থেকে ৫০০টাকা খরচ পড়বে। তাবু নিয়ে গেলে এখানে ইস্কুলের সামনে বা অন্য যেকোনো সুবিধা জনক স্থানে তাবু টাঙ্গিয়েও থাকতে পারবেন। তাবু টাঙ্গানোর আগে একটা বিষয় মাথায় রাখা ভালো যাতে পাবলিক টয়লেটটা যেন নাগালের মধ্যে থাকে।
ছায়াবীথি : হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত? তো জিরিয়ে নিন ছায়াবীথিতে। ছায়ার সাথে হাওয়া ফ্রি। শরীরের সাথে মনও জুড়াবে।
রুন্ময় : রুন্ময় শব্দটি লুসাই ভাষা থেকে নেয়া। বাংলা অর্থ সুন্দর ঘর। লাল ও বেশ খাড়া টিনের চমৎকার স্থাপনা। আমরা সাজেক উপতক্যার যত ছবি দেখি তাঁর অধিকাংশই এ ঘরের। এই শৈল্পিক অবকাঠামোর কটেজটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
রক প্রশান্তি ক্যান্টিন : খাবারের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। এটা সাজেকের তথ্য ভাণ্ডারও; এখানে সব প্রয়োজনীয় তথ্য এখানে পাওয়া যায়। অনেকটা ওয়েস্টার্ন সেলুনের মতো। উনারা ঠিক ক্যান্টিনের নিচেই ভালো থাকার ব্যাবস্থা করেছেন।.৮-১০ জন একসাথে থাকা যায়।
দি হরাইজন গার্ডেন : একটা ছোট্ট শেডের নিচে একটা দোলনা। বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘেরা। টাকা মাটি মাটি টাকা হলে ঢুকে পড়ুন এখানে। প্রবেশ মূল্য উসুল করতে চাইলে বেশ-কিছুক্ষণ সময় কাটাতে হবে। সময় নিয়ে টানাটানি থাকলে বাইরে থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকুন।
হেলিপ্যাড-১ : সাজেক ভ্যালীর ৩টি হেলিপ্যাডের মধ্যে হেলিপ্যাড-১ই সবচে সুন্দর। সম্ভবতঃ চন্দ্র স্নানের জন্য এরচে সুন্দর যায়গা পুরো উপতক্যতে দ্বিতীয় আর নেই।
ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পট : গেটে কোন লোক নেই। আপনি যেই একটু ভীতরে ঢুকেছেন অমনি একজন নাযিল হবেন এবং ২০ টাকা জরিমানা; এটা প্রবেশ মূল্য। সে আপনি পিকনিক করেন আর নাই করেন, প্রবেশ করেছেন তাই দিতে হবে। তিনটি টিনের ছাওনি দেওয়া গোল শেড গুলো দেখতে ভালোই লাগে। সাজেক উপতক্যার পূর্ব দিকটা এ শেডগুলো থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
সাজেক প্রকল্প সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক দারুণ প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এক সাজেক পুরো খাগড়াছড়ি এবং সাজেকের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে চাঙ্গা করে দিয়েছে। নৃ-গোষ্ঠীর সাথে সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির দারুণ উদাহারণ। আইডিয়াটা যার মাথা থেকেই বের হোক না কেনো দারুণ ফলপ্রসূ হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজেকের উচ্চতা প্রায় ৫০০ মিটার (১৬৫০ফুট)। পথিমধ্যে দুই নদীর মোহনা দেখতে ভুলবেন না। কাসালং ও মেনী নদী এক সাথে হয়ে মেনী নদী হয়ে বয়ে গেছে। হাজাছরা জলপ্রপাতও সাজেকের পথেই পড়েছে।
যেভাবে যাবেন :
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মধ্যে হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যেতে হয়। খাগড়াছড়ি থেকে ৩ ঘণ্টার রাস্তা, মোট ৬৭ কিলোমিটার। শেষের ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা একদম শেষ ৭ কিলোমিটার ভীষণ পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠতে হয়। বেশ কয়েকটি আর্মি, পুলিশ ও বিজিবি চেকপোস্টে রিপোর্ট করতে করতে যেতে হয়। ফিরার সময়ও বলতে বলতে আসতে হয়। ১০ থেকে ১২ জনের একটা গ্রুপ হলে সবচে ভালো। তাহলে একটা জীপ (চাঁদের গাড়ী) রিজার্ভ করলে সাশ্রয় হয়। গ্রুপ মেম্বার কম হলে সিএনজি ভাড়া করেও যেতে পারেন (সিএনজি-তে না যাওয়াই ভালো)। মোটরসাইকেল সার্ভিসও খারাপ না। একটা বাইকে ২ জন করে যাওয়া যায়। যে ভাবেই যান না কেন ফেরার বিষয়টা কনফার্ম করে তারপর যাবেন। সাজেকে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা