ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩৮ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
পরমাণু শক্তিধর বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে কম বেশি ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে বাংলাদেশ। সেই তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তলানীতে।
এ অবস্থায় ভারত-পাকিস্তান দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছে তখন বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যখন উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তখন বহিঃবিশ্ব বাংলাদেশকে তাদের মধ্যেই দেখে। তিনি বলছেন, আমরা অবশ্যই বিনিয়োগের কথা ভাবি, ব্যবসা বাণিজ্যের কথা ভাবি, বাইরে লোক পাঠানোর কথা বলি- এসব বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কূটনৈতিকভাবে এটা একটা বড় জায়গা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ দুইটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার যে সাতটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেটি হলো ভারত।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপর কোনো লাভ বা ক্ষতির আশঙ্কা আছে কী?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ।
তিনি বলেন, আপাতত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু না হলেও সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাণিজ্যিক যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতে পারতো, সেটা চলমান উত্তেজনা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বাংলাদেশকে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান-ভারত উভয় সার্কভুক্ত। সার্ককে কার্যকর করার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সার্কের সদস্য হিসেবে নানা রকম অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, সেখানে সব সময় ভারত ও পাকিস্তানের ইস্যু এক ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
নতুন উত্তেজনার ফলে সার্কভুক্ত দেশগুলো অর্থনৈতিক যে সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারতো, সেটাকে আরো পিছিয়ে দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রোকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশ হামলার নিন্দা জানানোর অর্থ এই নয় যে, এটা দ্বারা ভারতকে সমর্থন করছে। এটা সরাসরি বলা যাবে না। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগে থেকেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশে এখন পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ কোনো রাষ্ট্রদূত নেই।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির আরো বলেন, চলমান উত্তেজনা, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ওপর কতটা প্রভাব পরবে সেটা বোঝা যাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া কী, সেটা দেখা। তিনি বলেন, এটা হল একটা নীতিগত অবস্থান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এখন বাংলাদেশ যেখানে, যে প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী জঙ্গিবাদের শিকার হয়েছে সেখানেই নিন্দা জানিয়েছে। এখন কে জঙ্গিবাদের শিকার হল এবং কে শিকার করলো - সেটা কিন্তু আলাদা প্রশ্ন। এখানে কিন্তু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থান সেটাই ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
তবে অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, একেবারে ক্ষতির দিক চিন্তা না করে এর উল্টোটাও হতে পারে।
যদি উত্তেজনা বাড়তে থাকে, তাহলে ভারত-পাকিস্তান যে পণ্যগুলো নিজেরা বিনিময় করতো, সেসব পণ্য পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে।
