রোহিঙ্গা সংকটে রাজনৈতিক সমাধান গুরুত্বপূর্ণ: জাতিসংঘ দূত
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক দূত আহমেদ আল মেরাইখি।
তিনি বলেছেন, শুধু মানবিক সহায়তা বা প্রতিক্রিয়াতেই সমাধান নয়। মানবিক সহায়তা কেবল তাদের সাময়িক দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে। আমি মনে করি এর রাজনৈতিক সমাধান খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক দূত মেরাইখির সঙ্গে কক্সবাজারে গত ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি দু’দিনের মিশনে ছিলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সমাজ হিসেবে আমাদের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অপরিমেয়। যেসব শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে বিশ্ব ‘রাষ্ট্রহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছে তাদের নিজেদের সুন্দর জীবন গঠনে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন।
২০১৯ সালে ৬ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জরুরি সহায়তা দিতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের ২৯ শতাংশ তহবিল পেয়েছে সংস্থাটি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয় অবস্থার অনুপস্থিতি স্বীকার করে ফোর বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসন জাতিসংঘের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিসেফ বলছে, কক্সবাজারে অবস্থানরত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশু রাষ্ট্রহীন শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে। তারা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং হতাশা ও নৈরাশ্যের ঝুঁকিতে আছে।
তারা আরো বলছে, আন্তর্জাতিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ব্যাপক মানবিক প্রচেষ্টা অগণিত শিশুর জীবন রক্ষা করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনবহুল শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত এ রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টেকসই কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।
বর্তমানে কক্সবাজার এলাকাজুড়ে ‘শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে’ ভর্তি হওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর ওপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে করা এক জরিপের ফলাফলে শিক্ষার প্রয়োজনের ব্যাপকতা উঠে আসে।
এতে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি শিশু প্রাক-প্রাথমিক থেকে গ্রেড ১-২ পর্যায়ে পড়াশোনা করার যোগ্য। মাত্র ৪ শতাংশ গ্রেড ৩-৫ পর্যায়ে এবং ৩ শতাংশ গ্রেড ৬-৮ পর্যায়ে পড়ার যোগ্য ছিল। ২০১৮ সালের শেষে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গাদের মাত্র ৩ শতাংশ কোনো ধরনের শিক্ষা বা কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে।
ড. আল মেরাইখি বলেন, এ প্রজন্মের রোহিঙ্গাদের পেছনে বিনিয়োগের জন্য আমাদের এ মুহূর্তে এবং সম্মিলিতভাবে সম্মত হতে হবে, যাতে তারা আজ তাদের জীবনকে আরো ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে এবং তারা যখন মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হবে তখন যেন তারা সেখানকার সামাজিক পুনর্নির্মাণে গঠনমূলক অংশ হতে পারে। বর্তমানে আইনি পরিচয় ব্যাতীত তারা পাচারকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের অনুকম্পায় রয়েছে।
ইউনিসেফ শিক্ষামূলক প্রকল্প নিয়ে ৪-১৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৫৫ হাজার শিশুর কাছে পৌঁছেছে। প্রকল্পটিতে ক্রমান্বয়ে উন্নত মান, কাঠামোগত শিক্ষা ও দক্ষতা যুক্ত হচ্ছে। ২০১৯ সালের জন্য অগ্রাধিকার হচ্ছে, বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের স্বাক্ষরতা ও সংখ্যা গণনার প্রাথমিক দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট কারিগরি দক্ষতা শেখানো।
বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র জেলা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়ার বিষয়েও বেশ জোরালো প্রচেষ্টা থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ফোর বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু এটি প্রয়োজনের বালতিতে পানির একটি ফোটা মাত্র। এটি একটি অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি। রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দক্ষতাবিহীন রাখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, তারা (রোহিঙ্গা শিশু) যদি নিজেরা বেঁচে থাকার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে, তাহলে তাদের কমিউনিটিগুলোও নিজে থেকে টিকে থাকতে এবং সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে। সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গারা তাদের কমিউনিটি এবং বিশ্বের কাছে সম্পদ হতে পারে।
