মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ মাস পর টনক নড়লো বাফুফের
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার

ফিফার গোল প্রজেক্ট-২ এর আওতায় আর্টিফিশিয়াল টার্ফ স্থাপনের জন্য মতিঝিলে বালুর মাঠটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে দিন গণনা শুরু হয়ে ১০ বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষ হওয়ার বছর পার হলেও সরকারি এ জায়গার লিজের চুক্তি নবায়ন করেনি বাফুফে। নিয়ম অনুযায়ী লিজ নবায়ন করতে চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত দুই মাস আগে নতুন চুক্তি বাধ্যতামূলক।
বাফুফের অবশ্য ঘুম ভেঙেছে অনেক পরে। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ১৩ মাস পর বাফুফে চুক্তি নবায়নের জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব মো. মাসুদ করিম বরাবর লেখা চিঠিতে চুক্তি নবায়নের আবেদন করেছে বাফুফে।
বাফুফে ভবন সংলগ্ন বালুর মাঠের জায়গার পরিমাণ প্রায় ৫ বিঘা। এ জায়গা লিজের চুক্তিপত্র ফিফায় পাঠানোর পরই বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা এখানে আর্টিফিশিয়াল টার্ফ স্থাপন করে। ২০১২ সালের ৬ মার্চ আর্টিফিশিয়াল টার্ফ উদ্বোধন করেছেন ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার। উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঝাং জিলং।
ফিফা যে টার্ফ স্থাপন করেছে বালুর মাঠে, তার স্থায়িত্ব ৭ বছরের মতো। এই টার্ফের উপর দিয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড ধকল। নারী ফুটবল দল সারাবছর এখানে অনুশীলন করে। আশপাশের অনেক ক্লাবও অনুশীলন করে এই টার্ফে। এলাকার কিশোররাও এখানে নিয়মিত ফুটবল খেলে বাফুফের সঙ্গে সমন্বয় করে। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও বাফুফের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে ফুটবল খেলার আয়োজন করে এই টার্ফে।
অতি ব্যবহারে ইতিমধ্যেই টার্ফের বিভিন্ন জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দ্রুতই এই টার্ফ সংস্কার প্রয়োজন। আর ফিফা সংস্কার করতে আসলেই চাইবে জায়গার নতুন চুক্তিপত্র। যে কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ মাস অতিক্রমের পর টনক নড়েছে বাফুফের।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বালুর মাঠ লিজে যে শর্তগুলো দিয়েছিল বাফুফেকে, তার প্রধান শর্তই উপেক্ষা করেছে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। বিনা মূল্যের লিজ চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল জমির খাজনা পরিশোধ করবে বাফুফে। নতুন লিজ নবায়ন করতে হলে গত ১০ বছরের খাজনা প্রদানের হালনাগাদ কাগজপত্র আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। কিন্তু বাফুফে গত ১০ বছরে কোনো খাজনাই পরিশোধ করেনি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত ১০ বছরে এক টাকাও খাজনা দেয়নি বাফুফে। নতুন করে লিজের চুক্তি নবায়নের আগে বাফুফের কাজে খাজনা না দেয়ার কারণ জানতে চেয়ে অবশ্য সঠিক জবাব পায়নি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
বাফুফে কেন খাজনা দেয়নি? ‘খাজনা দেয়া হয়নি। নতুন করে লিজের চুক্তি হলে এই ১০ বছরের খাজনা দেয়ার সময় বকেয়াটাও পরিশোধ করে দেবো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে তা জানিয়েছি’-বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
লিজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ মাস পর কেন নবায়নের আবেদন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘নানা কারণে হয়ে উঠেনি। এখন আমরা নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।’
খাজনা না দেয়া এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ মাস পর নবায়নের আবেদন করার পরও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত ফাইলে সই করেছেন পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান।
এ সপ্তাহের মধ্যেই চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে বালুর মাঠ আরো ১০ বছরের জন্য লিজ পাচ্ছে বাফুফে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদসূত্রে জানা গেছে, আগের ১০ বছর লিজের সব শর্ত বাফুফে না মানায় চুক্তি নবায়নের সময় কিছু শর্ত যোগ করবে তারা।