পলাশের ফেসবুকে ভুয়া তথ্যের ভান্ডার
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৪৪ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী ও কমান্ডো অভিযানে নিহত মাহমুদ পলাশের পলাশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম মাহিবি জাহান। সেখানে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিজনেস এনালিস্ট। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেয়া আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। বসবাস করেন যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে।
তবে ‘অবাধ্য ছেলে’ উল্লেখ করে বাবা পিয়ার জাহান জানান, পলাশ কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেনি। স্থানীয় তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাশ করার পর সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু পড়াশোনা আর এগোয়নি।
সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। এক পর্যায়ে জানা যায়, পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশতো না, কথা বলতো না।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে শিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার শিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। বিয়ের কথা শিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়। আমরা শিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস থেকে আমার পাঠানো টাকা সে নানা পথে খরচ করেছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়া আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে। রোববার চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে জানান তিনি।
জানা যায়, নিহত ছিনতাইকারী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মাহমুদ পলাশ।

ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস:
পলাশের শেষ স্ট্যাটাস অনুযায়ী মনে হচ্ছে, তিনি কারও ওপর অভিমান করেছিল। তবে কার ওপর এ অভিমান তা উল্লেখ করেননি। ফেসবুকে নায়িকা শিমলার সঙ্গে অসংখ্য অন্তরঙ্গ ছবি রয়েছে পলাশের। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তারা বিবাহিত ছিলেন। তার ফেসবুকে দেখা যায় শিমলাকে নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী বিরহের গান দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে আপলোড করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সর্বশেষ পোস্ট করেছেন তিনি।
২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ফেসবুকে সিমলার সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে পলাশ লেখেন, “এ হচ্ছে আমার বউ যে আমার হাজার ভুলের মাঝে, আমাকে সহ্য করে পার করে দিল একটি বছর। দোয়া করবেন যাতে সারাটা জীবন এ পাগলিটা আমি এক সঙ্গে থেকে যেন মরতে পারি। বউ অনেক ভালোবাসি তোমায় আর কষ্ট দেব না। শুভ বিবাহবার্ষিকী আদরের পুতুল বউ আমার। আই লাভ ইউ লট মোর দেন মাইসেলফ!”

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি বিকেল ৩টা ১৫মিনিটে মাহমুদ পলাশের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়। যেখানে নায়িকা শিমলা ও মাহমুদ পলাশের অনেক ঘনিষ্ট ছবি দিয়ে বিরহের গানের ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। গানটি তিনি নিজের কণ্ঠে গেয়েছেন এবং গানের ক্যাপশন হিসেবে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ‘জাস্ট সি ইউ সুন’।
