রোববার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৩ ১৪৩২   ০৮ রজব ১৪৪৭

ঐতিহ্যের ওয়াহিদ মঞ্জিল এখন অভিশাপের দালান

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

ফাইভ-জি জেনারেশনে পুরান ঢাকার মানুষের কাছে ২০ ফেব্রুয়ারি এক ভয়াল-মর্মান্তিক কালরাত। ওই রাতে প্রায় পৌনে একশ পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সোনালী দিনের স্বপ্নের সমাধি ঘটে। মা হারান সন্তান, ভাই হারায় বোন, কেউ হারিয়েছেন স্বামী, আবার কেউ হারান পরিবারের সবাইকে। অনেকে প্রিয় মানুষটির দেহের সামান্য চিহ্নটুকুও খুঁজে পাননি। ভস্মীভূত হয়ে বিলিন হয়েছে প্রিয়জনের দেহ। ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সেই চুরিহাট্টা জামে মসজিদের পাশেই পোড়া ক্ষতে ওয়াহেদ মঞ্জিল দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্য নিয়ে। 

 

পুরান ঢাকার ডালপট্টি খ্যাত এলাকার প্রধান সড়কটির নাম হাজী বাল্লু রোড। হাজী বাল্লুর নাতি আলোচিত ওয়াহেদ। তার পিতার নাম সোবহান ব্যাপারী। সোবহান ব্যাপারীর একটি মোজাইক মুরাল ছিল ওই ভবনের দেয়ালে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি হতে সোবহান ব্যাপারী ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর লালাবাগের কাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ঢাকার সরদার পরিবারগুলোর মতো বাল্লু পরিবারের ছিল সামাজিক আধিপত্য। টানা ২২ বছরের বেশি সময় ধরে কাটারা ইউনিয়নের জন্য প্রতিনিধিত্বের ধারক ওই পরিবারের সন্তান হাজী আব্দুল ওয়াহেদ ছিলেন অসাধারন শক্তিধর পালোয়ান। ষাটের দশকে ঢাকা জুড়ে ছিল তার খ্যাতি। ওয়াহেদ পালোয়ানের শক্তিমত্তা ছিল আশ্চর্য জনক। শোনা যায়, তার বুকের উপর দিয়ে প্রাইভেট কার চলে গেলেও কিছুই হতো না। সেই ঐতিহ্যের খ্যাতি পেছনে ফেলে তার সন্তান হাসান-হোসেনের গড়া ওয়াহেদ মঞ্জিল এখন অভিশপ্ত দালান। 

২০ ফেব্রুয়ারির কালরাতে প্রায় পৌনে এক'শ লোকের জীবন গ্রাস করে চারতলার ওই মঞ্জিলের আগুন। ভবনটির দ্বিতীয় তলার পারফিউমের গোডাউন আর বডি স্প্রের আগুনে লন্ডভন্ড করে দেয় সাজানো গোছানো ওয়াহেদ মঞ্জিলকে। বাহির থেকে শুধু চাকচিক্যই নয় ভেতরেও ছিল অভিজাত কারুকাজ। ওই ভবনে যাতায়াত করতেন এমন অনেকেই বলেছেন, তাদের ঘরের ড্রইং রুমটি ছিল প্রায় এক হাজার ফিট লম্বা। সেগুন কাঠ দিয়ে বিশেষ ভাবে নকশা করে তৈরি করা হয়েছিল ফ্লোর। বিলাসবহুল ফিটিংসে সাজানো ছিল দুই ভাই হাসান-হোসেনের প্রতিটি রুম। ওই ভবনে ছিল একটি ক্লাবও। নাইট ক্লাবের আদলে তৈরি হলেও ক্লাবটিতে ছিল না কোন অশ্লীলতা। 

 

হাসান-হোসেনের চাচাতো ভাই হারন-অর-রশিদ ১৯৮৬ সালে বৃহত্তর লালবাগের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের একজন। বৃটিশ আমল থেকে বৃহত্তর লালবাগে বাল্লু পরিবারের আধিপত্যে ছিল।

স্বাধীনতার পর পরিবারটির বিপক্ষে আরেকটি পরিবার দাড়ানোর চেষ্টা করলে, নানা ভাবে নিবৃত্ত করা হয় তাদের। বাল্লু পরিবারে হাতে গোনা দুই তিনজন শিক্ষিত থাকলেও বেশির ভাগ সদস্য বিতর্কিত ব্যবসায়ী হিসেবে সমালোচিত। পরিবারিক ঐতিহ্যে যতটা প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা, তার চেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছে কয়েকজনের কারণে। পূর্ব পুরুষদের খ্যাতি ছাপিয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনায় বংশের বিতর্কিতদের জুলুম ও অত্যাচারকে দায়ি করছেন এলাকাবাসী।