বিধ্বস্ত চুড়িহাট্টায় এখনো স্বজনদের আহাজারি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৪৮ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার
চুড়িহাট্টায় গেলো চার দিনে শেষ হয়নি মানুষের আহাজারি। এখনো স্বজনদের আর্তচিৎকারে স্তব্ধ পুরো এলাকা। শান্তনা দেয়ার মতো ভাষা নেই কারো। আপনজনকে ফিরে পেতে ছবি হাতে বিরামহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে শতশত মানুষ। কোনো ভাবেই কমছে না উৎসুক জনতার ভিড়।
রোববার সরেজমিনে ওয়াহেদ ম্যানশন ও আশপাশে পুড়ে যাওয়া ভবন ঘুরে দেখা গেছে এসব দৃশ্য।
দেখা মেলে এক মহিলা কানে ফোন, হয়তো পরিবারের কাউকে শান্তনা দিচ্ছেন। ভাইকে জীবিত পাবেন না জেনেও পুড়ে যাওয়া দেহ পাওয়ার শেষ আকাঙ্খা তার। ভাইয়ের শেষ সম্বল পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন তিনি। ভাইকে ফিরে পাওয়ার আকুতি চোখেমুখে।
বড় ভাইকে খুঁজতে আসা সুফিয়া নামের এক বোন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনার সময় আমার ভাইয়া রিকসায় ছিলেন। ভাইয়ার সহযাত্রী প্রাণে বেচেঁ গেছেন। কিন্তু তিনি আমার ভাইয়ের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। আদো ভাইকে ফিরে পাব কিনা জানি না?
নুরুজ্জামান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী তুলে ধরেন সেদিনের কাহিনী। তিনি বলেন, আমার পরিচিত একই ইউনিয়নের ১৪ জন আগুনে পুড়ে গেছেন। ঘুমাতে পারি না। চোখের সামনে বন্ধুদের আর্তচিৎকার আমায় কাঁদায়।
তিনি আরো বলেন, হয়তো আমিও থাকতাম না, যদি না পান খেতে বাহিরে যেতাম। এখন মনে হচ্ছে আল্লাহ আমাকে নিজ হাতে বের করে এনেছেন। জাহান্নামের আগুন যে কত ভয়ানক, তা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের মাফ করুন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় ছিল পারফিউম ও কেমিক্যালের গোডাইন। ধারনা করা হচ্ছে, সেখানেই আগুনের সূত্রপাত। সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধারণ ভিডিও ফুটেজেও স্পষ্ট দেখা গেছে প্রথম বিস্ফোরণ হয়, ওই দোতলা থেকে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফা বিস্ফোরণও হয় ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায়। ওই সময় বাইরে মসজিদের কাছে নীচের রাস্তায় ছিটকে আসে পারফিউম বা বডিস্প্রের ছোট ছোট কন্টেইনার। যা বিস্ফোরিত হয়ে একটি গ্রেনেডের মতো আঘাত করছিল। এরপর ধীরে ধীরে আগুন ছড়ায় এবং রাস্তায় থাকা গাড়িগুলো বিস্ফোরিত হয়।
তিনতলা ও চারতলা ছিল আবাসিক ফ্ল্যাট। সাধারণ ভাবেই বোঝা যায়, একটি পরিবারে আসবাবপত্র ছাড়া তেমন কিছুই থাকে না আগুন দ্রুত ছড়ানোর জন্য।
হাজী ম্যানশনের সামনের গেটের বেজমেন্টে ছিল কেমিক্যাল, যা সরিয়ে ফেলার কাজ চলছে।
তিনতলা ও চার তলায় গিয়ে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা বেদনাদায়ক। দেখা যায় কাপড়গুলো এলোমেলো অনেকটা পুড়ে ছাই আবার কিছুটা একদম ঠিক। আলমারির ভেতরে সব বাটি প্লেট সেই আগের মতই রয়েছে, কিন্তু নেই শুধু এগুলো ব্যবহারকারী ঘরের লক্ষী।
এদিকে ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনের সূত্রপাত নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। যখন এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য সারাদেশ দুষছে কেমিক্যালের কারখানাকে। অন্যদিকে চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা সহজ ও সত্যটি মানতে নারাজ। তাদের দাবি কেমিক্যাল থেকে নয় বরং আগুনের সূত্রপাত হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে।
শমসের নামের এক কেমিক্যাল ব্যবসায়ী বলেন, এখানে যে আগুন লেগেছে সেটি অবশই সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে, কেমিক্যাল থেকে নয়।
তাহলে কি করে আগুন এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আরো গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেদক নিজে সারারাত ঘটনাস্থলে থেকে তাৎক্ষণিক প্রকৃত বাস্তবতা দেখেছেন এমন প্রশ্নে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, পারফিউমের দোকান ছিল সেগুলো হতে পারে। চোখের সামনে কেমিক্যাল সরানো হচ্ছে, তারপরও শিকার করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা।
তাদের এসব কথায় প্রশ্ন উঠতেই পারে আবাসিক ভবনে কি কেমিক্যাল রাখার জন্য গুদাম ভাড়া দেয়া সঠিক? কেমিক্যাল কে না বলা সবাই সিলিন্ডার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, নিজেদের ব্যবসা ঠিক রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে কিছু অসাধু চক্র।
কিন্তু প্রশ্ন হলো আসলেই কি কেমিক্যাল মুক্ত এলাকা করতে পারবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাইদ খোকন? তা না হলে এমন শত শত প্রাণ অকালে জড়ার শঙ্কা রয়েই যাবে বলে দাবি করছেন স্বজনহারা পরিবারগুলো। প্রশ্ন হলো সিটি মেয়র একা নয়, তার সঙ্গে সচেতনমহল যদি সরকারের সঙ্গে একাত্মা হয়ে কাজ করেন তা হলে কেমিক্যাল মুক্ত এলাকা গড়া সম্ভব।
পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি সরু গলি ও ঠাসবুনোটে লেগে থাকা ভবনগুলো এখন মৃত্যু উপত্যকা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে আরো ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এছাড়া পুরানো বাড়িগুলোও সংস্কার যোগ্য হয়ে পড়েছে।
