শুক্রবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৩ ১৪৩২   ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আমাকে বিক্রি করে দিন, রিয়াল সভাপতিকে মার্সেলো!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:১০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

তাহলে আগামী মৌসুমেই বন্ধু ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে পুনর্মিলনী হতে যাচ্ছে মার্সেলোর? ব্রাজিলিয়ান এই তারকা রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দিতে যাচ্ছেন জুভেন্টাসে? আভাস-ইঙ্গিত সেরকমই। স্পেনের রেডিও স্টেশন কোপ-এর খবর, মার্সেলো সরাসরিই রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কাছে অনুরোধ করেছেন তাকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। বলেছেন, সমর্থকদের সমালোচনা একদমই নিতে পারছেন না। রিয়াল ছাড়তে চান তিনি।

 

গত বছরের জুলাইয়ে রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন রোনালদো। এর পরপরই মার্সেলোর দিকেও হাত বাড়ায় জুভেন্টাস। গণমাধ্যমের খবর, রোনালদোই বন্ধু মার্সেলোকে কেনার জন্য জুভেন্টাস কর্তাদের অনুরোধ করেন। পাশাপাশি মার্সেলোকেও বারবার ফোন করে অনুরোধ করেন জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার জন্য।

প্রিয় বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মার্সেলোও রাজি হন। কিন্তু রিয়াল না ছাড়ায় ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার থেকে যান রিয়ালেই। তবে পরিস্থিতি এখন এতোটাই ঘোলাটে যে, মার্সেলোকে মুখ ফুটেই বলতে হচ্ছে তাকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য! কঠিন এই পরিস্থিতির জন্য অবশ্য মার্সেলো নিজেই দায়ী।

রিয়াল মাদ্রিদ সেরাদের ক্লাব। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সব সময় সেরাটাই প্রত্যাশা ক্লাব কর্তা-সমর্থকদের। পান থেকে চুন খসলেই তাকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করা হয়। মার্সেলো রিয়ালের এই প্রত্যাশাটা ভালো করেই জানেন। কারণ, এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে রিয়ালের তাবু তলে আছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার।

শুধু থাকার জন্য থাকা নয়। কোচ-কর্তাদের আস্থা, সমর্থকদের নয়নের মণি হয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর। প্রতিভা আর সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন রিয়ালের রক্ষণভাগের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। কিন্তু বয়সের ভারেই কিনা, এই মৌসুমে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার যেন নিজেকে আর সেরা রূপে খুঁজে পাচ্ছেন না। ম্যাচের পর ম্যাচ করে চলেছেন অমার্জনীয় সব ভুল। যে ভুলের চড়া মূল্যই দিতে হচ্ছে রিয়ালকে।

 

গত রোববার নিজেদের ঘরের মাঠ বার্নাব্যুতে পুঁচকে জিরোনার কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে রিয়াল। এই হারের জন্যও একমাত্র মার্সেলোই দায়ী। তার এক শিশুতোষ ভুলেই জয়সূচক গোলটি করে জিরোনা। শুধু জিরোনার ম্যাচে নয়, এই মৌসুমে অনেকবারই হাস্যকর ভুল করে রিয়ালকে ডুবিয়েছেন মার্সেলো। ফল, কোচ সান্তিয়াগো সোলারির আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। শুরুর একাদশের জায়গাটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে।

অনেক ম্যাচেই তাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখছেন কোচ। যাও-বা শুরুর একাদশে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, হাস্যকর ভুল করে বিদ্ধ হচ্ছেন সমালোচনার তীরে। কদিন আগেও যাদের কাছে ছিলেন নয়নের মণি, এখন রিয়ালের সেই সমর্থকরাই দুয়ো দিচ্ছে মার্সেলোকে।

নিজের ভুলটা মানছেন মার্সেলো। কিন্তু সেই ভুলের জন্য নিজ দলের সমর্থকদের দুয়ো এবং গা সেদ্ধ করা সমালোচনা একদমই হজম করতে পারছেন না। গায়ে যেন কাটা হয়ে বিঁধছে। তাই পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ক্লাব ছাড়ার জন্য। রেডিও কোপ-এর খবর, মার্সেলো গত সোমবার নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রথমে কথা বলেন রিয়ালের প্রধান নির্বাহী পরিচালক হোসে অ্যাঙ্গেল সানচেজের সঙ্গে।

বৈঠকে ৩০ বছর বয়সী মার্সেলো নাকি সানচেজকে সরাসরিই বলেন, ক্লাব ক্লাব ছাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে। কূটনৈতিক ভাষায় বলেন, ‘যদি রিয়াল মাদ্রিদ আমাকে আর না চায়, আমি চলে যাব।’ রিয়ালের সঙ্গে মার্সেলোর চুক্তি আছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু মার্সেলো বুঝতে পারছেন ততদিন রিয়ালে তার থাকা হবে না। সেরাটা দিতে না পারলে রিয়ালই তাকে রাখবে না।

তাই বেশ বাজিয়ে গুছিয়ে বলেছেন, ‘আমি যদি সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় থাকি, যাদের মাদ্রিদ বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তারা আমার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। যেদিন আমাকে রিয়াল আর চাইবে না, সেদিনই আমি চলে যাব। আশা করব, আমার ভবিষ্যতের বিষয়টি যেন দ্রুতই সমাধান করা হয়।’

প্রধান নির্বাহী পরিচালক সানচেজের সঙ্গে একান্তে কথা বলার পর মার্সেলো নাকি সরাসরি সভাপতি পেরেজের সঙ্গেও বসেছিলেন। ক্লাব সভাপতিও সরাসরি বলেছেন, তাকে বিক্রি করে দিতে। আর রিয়াল বিক্রি করে দিলে তার পরের ঠিকানা যে জুভেন্টাসই হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ, ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডারকে কেনার জন্য একমাত্র জুভেন্টাসই আগ্রহ দেখিয়েছে। মার্সেলো নিজেও জুভেন্টাসেই যেতে চান।

 

তবে সবকিছুই নির্ভর করছে রিয়ালের কর্তাদের ওপর। বিশেষ করে সভাপতি পেরেজের ওপর। তিনি বিক্রি করতে রাজি হলে কেউ ঠেকাতে পারবেন না। তবে মৌসুমের এখনো অনেকটা সময় বাকি। সামনের এই সময়ে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন দেখার।

সেই ২০০৭ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন রিয়ালে। সেই থেকে বার্নাব্যুই তার ঘর-বাড়ি। সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়ে ক্লাবকে উপহার দিয়েছেন ৪টি লিগ, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৪টি বিশ্ব ক্লাব বিশ্বকাপসহ মোট ২০টি শিরোপা। সেই মার্সেলোকেই এখন মুখ ফুটে বলতে হচ্ছে, তাকে বিক্রি করে দিতে!

পেশাদার ফুটবলের দুনিয়াটা সত্যিই বড় নিষ্ঠুর! পারফরম্যান্সই সব। পারফরম্যান্সের সঙ্গে আবেগ-ভালোবাসা জড়িত। পারফরম্যান্স ভালো না হলে ভালোবাসাও থাকে না!