১২১ নম্বর গানটি তাকে শোনাতে খুব মন চাইছে...
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী, সঙ্গীত শিল্পী, নাট্য ও চিত্র পরিচালক। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে মেহের আফরোজ শাওনের। বহুমুখী গুণের অধিকারী এই মানুষটির আরেকটি বড় পরিচয়, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক হুমায়ুন আহমেদর স্ত্রী। ২০০৫ সালে হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে পবিত্র বন্ধনে জড়ান শাওন। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে না ফেরার দেশে পারি জমান সব থেকে পাঠকপ্রিয় এ লেখক (হুমায়ুন আহমেদ)। গান খুব পছন্দ করতেন হুমায়ুন আহমেদ। একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের একটি স্মৃতি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন শাওন।
আজ রাত আড়াইটার দিকে শেয়ার করা স্টাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“একটা গাছে চারটা পাখি। তিনটা উড়ে গেলে কি হবে?”
উত্তর দিতে পারিনি আমি। প্রশ্নই বুঝিনি ঠিকমত!
“১ টা গাছে ৪ টা পাখি। ৩ টা উড়ে গেলে কি হবে?”
এবার কাগজে লিখে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
“১ টা পাখি একা একা থাকবে!”- উত্তর দিলাম আমি।
“আচ্ছা- তুমি শুধু সংখ্যাগুলোকে আলাদা করে ভাবো তো!”
“এক, চার, তিন! মানে একশ তেতাল্লিশ!”
“উফফফ! একশ তেতাল্লিশ না! ১... ৪... ৩...”
“এক চার তিন মানে!” সরল প্রশ্ন আমার।
এবার তিনি কাগজটা টেনে তাতে লিখলেন-
‘১... ৪... ৩...’ তারপর আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন- “এখন এই সংখ্যা তিনটার নিচে এমন ৩ টা ইংরেজী শব্দ বসাও যেগুলো ১টা অক্ষর, ৪টা অক্ষর আর ৩টা অক্ষরের হবে এবং ৩ টা শব্দ মিলে একটা অর্থবোধক মিষ্টি বাক্য হবে যে বাক্যটা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই আমি।”- ভ্রু বাঁকা করে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসলেন তিনি।
তার মুখভঙ্গি দেখে মুহূর্তের মধ্যে আমার মাথায় ১০০ পাওয়ারের বাতি জ্বলে উঠলো!
আমি শুকনো মুখ করে বললাম-
“I hate you...”
হো হো করে হেসে দিলেন তিনি। তার পরমুহূর্তেই চুপ হয়ে গেলেন। কোমল কণ্ঠে আবৃত্তি করে উঠলেন রবীন্দ্রনাথের ‘বিদায় অভিশাপ’এর প্রিয় দুই লাইন।(শুধু ‘সখা’ শব্দটা একটু বদলে দিয়ে ‘সখী’ করে নিলেন)-
“হায় সখী! এ তো স্বর্গপুরী নয়—
পুষ্পে কীটসম হেথা তৃষ্ণা জেগে রয়...”
“তোমার বাসায় সঞ্চয়িতা আছে নিশ্চয়?”- কিছুক্ষণ থেমে বললেন তিনি।
“আছে।”
“আজ বাসায় গিয়ে সঞ্চয়িতার ১২১ নম্বর গানটা খুঁজে বের করবে। এই গানটা তোমার জন্য আমার উপহার। আমি যা বলতে চেয়েছি ঐ বুড়োটা আগে ভাগেই বলে ফেলেছে! গাইতে জানলে তোমাকে এ গানটা গেয়ে শোনাতাম।”
এর প্রায় আট বছর পর সেই ১২১ নম্বর গানটি তাকে গেয়ে শুনিয়েছিলাম।
১ টা গাছে... ৪ টা পাখি... ৩ টা উড়ে গেলে কি হয় আমি তখন জানি।
সেই ১২১ নম্বরখানা কতোবার যে গাইতে হলো পরের বছরগুলোতে! আরো আট বছর পর গানটা ফিতাবন্দী করে ফেললাম।
স্টুডিওতে তার সামনে গানটা গাইতে গিয়ে মনে হলো ১৬ বছর আগের পাওয়া সেই উপহার তাকেই যেন আবার দিলাম।
১৯৯৫... ২০০৩... ২০১১...
আবার আট বছর পেরিয়েছে!
১২১ নম্বর গানটি তাকে শোনাতে খুব মন চাইছে...'।
