মান্নার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রোববার

জগতে কিছু মানুষ থাকেন যাদের কোনো মৃত্যু হয় না। বেঁচে থাকেন তাদের কর্ম দিয়ে। চিরকাল অমর হয়েই থাকেন মানুষের মনের মনিকোঠায়। তেমনই একজন অভিনেতা ছিলেন নায়ক মান্না।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেয়া এই নায়কের আসল নাম এস এম আসলাম তালুকদার। ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি ছিল অন্যরকম ভালোবাসা। স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন অভিনয় করবেন। আর সেই স্বপ্ন ধরা দেয় ১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে। শুরু হয় মান্নার চলচ্চিত্র জীবন।
আশির দশকে মান্না যখন ছবিতে অভিনয় শুরু করেন, সে সময় রাজ্জাক, আলমগীর, জসীম, ফারুক, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনের নায়ক হিসেবে বেশ দাপট। সেই দাপুটে অভিনেতাদের মাঝেও ‘তওবা’, ‘পাগলী’, ‘ছেলে কার’, ‘নিষ্পাপ’, ‘পালকি’, ‘দুঃখিনী মা’, ‘বাদশা ভাই’-এর মতো ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন মান্না। দুঃখজনক হচ্ছে, এসব ছবির কোনোটিতেই মান্না প্রধান নায়ক ছিলেন না। তাই সাফল্যের ভাগীদার খুব একটা হতে পারতেন না।
মান্না অভিনীত প্রথম ছবি ‘তওবা’ হলেও প্রথম ছবি হিসেবে যে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল তার নাম ‘পাগলী’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাশেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন মান্না। এ ছবিটি সুপার-ডুপার হিট হয়। এরপর পথচলায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয় করেছেন তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে।
ছবি গুলোতে তার হাসি-কান্নার অভিনয়, অ্যাকশন, সংলাপ বলার ধরন সব কিছু মিলেই অন্যরকম স্টাইল তিনি দাঁড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর থেকেই বহু অভিনেতার অনুকরণীয় হয়ে উঠেন মান্না। একটা সময় ছিল, যখন ছবিতে শুধু মান্না আছেন এ কারণেই দর্শক হলে ছুটে গেছেন, তার কারণেই ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। তার অভিনয় করা কিছু ছবি আছে যার মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রেমিদের হৃদয়ে আজীবন মহানায়ক হয়ে থাকবেন মান্না।
২০০৮ সালের আজকের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মান্না মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলে তার নিজ গ্রামে এই নায়ককে সমাহিত করা হয়। চলে গেছেন মান্না রেখে গেছেন তার কাজ। এর ভীরেও কিছু তথ্য রয়ে যায় খবরের অন্তরালেই।
ডেইলি বাংলাদেশ-এর পাঠকদের জন্য মান্না সম্পর্কে তেমনই কিছু তুলে ধরা হলো-
১. নায়ক মান্নার পুরো নাম তার পুরো নাম এস এম আসলাম তালুকদার।
২. ১৯৬৪ সালে ৬ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তী এ নায়ক। সেখানেই কাটিয়েছেন শৈশব-কৈশর।
৩. উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পর ১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে। একই প্রক্রিয়ায় সে সময় মান্নার সঙ্গে আরো চলচ্চিত্রে এসেছিলেন খালেদা আক্তার কল্পনা, নায়ক সুব্রত, নায়ক সোহেল চৌধুরী, নিপা মোনালিসা যারা মান্নার জীবিত অবস্থায়ই হারিয়ে গিয়েছিলেন।
৪. নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত বলাকায় সিনেমা হলে গিয়ে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ বিজ্ঞাপন দেখতে পান। তারপর টিভি আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি দেখে বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি ইন্টারভিউ দেন। সেসময় সুযোগও পেয়ে যান।
৫. মান্না অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘তওবা’ হলেও প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পাগলী’।
৬. মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মান্না।
৭. ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে সব ছবিতে মান্না ছিলেন ২য় নায়কের ভূমিকায়। ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিটি সুপার ডুপার হিট হওয়ার কারণে মান্না একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।
৮. মান্না একমাত্র নায়ক যিনি শতাধিক পরিচালক ও ৬১ জন নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটি রেকর্ডের সামিল।
৯.মান্না শুধু নায়কই ছিলেন না ছিলেন সফল প্রযোজকও। ১৯৯৭ সালে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান মান্না। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কৃতাঞ্জলি চলচিত্র’।
১০. ১৯৯৭ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (২০১০ এর ফেব্রুয়ারি) মান্না একাই বাংলা চলচ্চিত্রকে টেনে নিয়ে গেছেন। যে সময়টাকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে খারাপ সময়। সেসময় এতো বেশী সুপারহিট ব্যবসাসফল ছবি আর কোন নায়কের নেই।
১১. এমনো বছর গিয়েছে যেখানে সেরা ১০ টি ব্যবসা সফল ছবির নাম খুঁজলে দেখা যেতো সবগুলোই মান্নার ছবি।
১২. সেই ৮০র দশকে সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা থেকে শুরু করে চম্পা, দিতি, রোজিনা, নতুন, অরুনা বিশ্বাস, কবিতা এর মতো সিনিয়র নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করে যেমন সফল হয়েছিলেন তেমনি মৌসুমি, শাবনুর, পূর্ণিমা, মুনমুন, সাথী, স্বাগতা, শিল্পী, লিমা সহ এই দশকের নায়িকাদের সঙ্গেও সফল ছিলেন মান্না।
১৩. ঢাকাই ছবির মহা নায়ক খ্যাত নায়ক মান্না নায়ক হয়েও সবচেয়ে বেশি গুন্ডার অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে বেশি পুলিশের অভিনয়টাও তার ঝুলিতে। এছাড়া নায়ক মান্না গুন্ডামি এবং প্রেমের চরিত্রগুলোও সমানতালে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন।