জিদান-গার্দিওলাদের তালিকায় আর্জেন্টাইন সোলারি!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৩৬ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

যেন একটা ঘুম দিয়েছিলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন রাজপথ থেকে রাজ সিংহাসনে। কোচ সান্তিয়াগো সোলারির গল্পটা ঠিক একই রকম। সাড়ে তিন মাস আগেও কোচ হিসেবে পরিচয় ছিল না যার, সেই সান্তিয়াগো সোলারির নামটা এখন বিশ্ব জয় করা জিনেদিন জিদান, পেপ গার্দিওলাদের তালিকায়! নিজের সাফল্যে নিজেই বিস্মিত রিয়াল মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন কোচ।
এই তো গত ২৯ নভেম্বর তৎকালীন কোচ জুলিয়েন লোপেতেগুইকে বরখাস্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে সান্তিয়াগো সোলারির নাম ঘোষণা করে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যরা তো বটেই, রিয়াল কর্তাদের এইা কাণ্ডে সোলারি নিজেই বিস্মিত হন! শীর্ষ পর্যায়ে কোচিং করানোর বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞা নেই যার, সেই সোলারির কাছে কিনা বিশ্বসেরা রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব!
বিস্মিত হলেও হঠাৎ পাওয়া চ্যালেঞ্জটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই গ্রহণ করেন ৪২ বছর বয়সী সোলারি। আর সাড়ে তিন মাসের মধ্যে প্রমাণ করে দিলেন দলকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করতে অভিজ্ঞতা বড় কোনো বিষয় নয়। আসল বিষয় খেলোয়াড়দের মনের ভাবটা পড়ে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সেই সম্পর্কের জোরে দলকে একট্টা করা। ভালোবাসার মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনা।
হ্যাঁ, অভিজ্ঞতার ঘাটতিটা ভালোবাসা দিয়েই পূর্ণ করেছেন সোলারি। ফল, লেপেতেগুইয়ের অধীনে মাঠে খাবি খাচ্ছিল যে রিয়াল, সেই রিয়ালই সোলারির অধীনে এখন অনেকটা অপ্রতিরোধ্য। টানা জয়ে লিগ শিরোপা জয়ের দৌড়ে ফিরে এসেছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং কোপা ডেল রের শিরোপা দৌড়েও টগবগিয়ে ছুটছে।
কোচ সোলারির এই সাফল্য মনে করিয়ে দিচ্ছে জিনেদিন জিদান, পেপ গার্দিওলা, লুইস আরাগোনেস, ভিসেন্তে দেল বস্ক, দিয়েগো সিমিওনিসহ সেসব কোচদের। যারা কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই পেয়েছেন অবিশ্বাস্য সাফল্যের দেখা। সোলারি এখনো শিরোপা সাফল্য পাননি। তবে এই আর্জেন্টাইন দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে রিয়ালকে অন্ধকার গলি থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন এবং টেনে যাচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনাসহ লা লিগায় অনেক কোচই ক্যারিয়ারের শুরুতেই দলকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। পৌঁছেছেন সাফল্যের সুউচ্চ শিখরে।
কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই সফল, লা লিগার ইতিহাসে এমন কোচদের তালিকার প্রথম নামটি মিগুয়েল মুনোজের। ১৯৯০ সালে পরপারে পাড়ি জমানো স্প্যানিশ এই কোচ ১৯৫৮ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানেন। পরের মৌসুমেই হয়ে যান রিয়াল মাদ্রিদের মূল দলের কোচ! আর দায়িত্ব পেয়েই সফল তিনি।
দায়িত্বের প্রথম বছরেই রিয়ালকে জেতান ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা। যা বর্তমানে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামে পরিচিত। একইসঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের শিরোপাও জেতান তিনি। প্রয়াত এই কিংবদন্তি দুই দফায় মোট ১৬ বছর কোচিং করিয়েছেন রিয়ালকে। সেই ১৬ বছরে রিয়ালকে ৯টি লিগসহ ১৪টি শিরোপা জেতান। যা এখনো তাকে রেখেছে রিয়ালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী কোচদের তালিকার এক নম্বরে।
রিয়ালকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপা জেতানো কোচের নাম জিনেদিন জিদান। ফরাসি এই কিংবদন্তিও ২০১৬ সালে রিয়ালের কোচের দায়িত্ব নেন কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই। অভিজ্ঞতা বলতে রিয়ালে একটা মৌসুমে কার্লো আনচেলত্তির সহকারী ছিলেন তিনি। এরপর দায়িত্ব নেন রিয়ালের বি দলের। কিন্তু ২০১৬ সালে রাফায়েল বেনিতেজকে বরখাস্ত করে জিদানকে প্রধান কোচ করে রিয়াল। দায়িত্ব নিয়েই ফরাসি মহানায়ক রিয়ালকে পাল্টে দেন ভোগভাজির মতো।
বেনিতেজের অধীনে খাবি খাওয়া রিয়ালকে জিদানের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। যার ফল, মাত্র আড়াই মৌসুমেই জিদানকে রিয়ালকে জেতান ৯টি শিরোপা। গড়েন টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি। যে কীর্তি ইতিহাসের আর কোনো ক্লাবের নেই।
পেপ গার্দিওলার গল্পটাও ঠিক একই রকম। ২০০৮ সালে বার্সেলোনার বি দলের কোচ ছিলেন তিনি। সেখান থেকে হুট করেই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মূল দলের। যা দেখে ভ্রু কুচকে ছিল অনেকেই। গার্দিওলা নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে একদমই সময় নেননি। বরং টিকি-টাকার দর্শনে বার্সেলোনাকে করে তোলেন অপ্রতিরোধ্য। মাত্র ৪ বছরেই ৩টি লিগ, ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ দলকে জেতান ১৪টি শিরোপা। যা বিশ্বের অনেক নামাদামী কোচ পুরো ক্যারিয়ারেও জিততে পারেননি।
একই রকম ভাবে ভিসেন্তে দেল বস্ক, লুইস আরাগোনেসরাও ক্যারিয়ারের শুরুতেই কোচিং দক্ষতায় চমকে দেন সবাইকে। সোলারির বন্ধু এবং স্বদেশি দিয়েগো সিমিওনির নামটাও যোগ হয়েছে এই তালিকায়। ৪৮ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ২০১১ সালে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। শুরুতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তার তেমন ছিল না।
কিন্তু নিজের ফুটবল মস্তিস্ক দিয়ে সেই অনভিজ্ঞতাকে জয় করেছেন। নিজ দক্ষতায় সাদামাটা অ্যাতলেতিকোকে পরিণত করেছেন জায়ান্ট রূপে। অ্যাতলেতিকো যে এখন রিয়াল-বার্সার সঙ্গে সমানে সমান টক্কর দিচ্ছে, তা এই সিমিওনির হাতের জাদুতেই। সোলারিও সেই বার্তাই দিচ্ছেন। সাড়ে তিন মাসেই জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন।
তবে এই হিরোর আসন ধরে রাখতে হলে সাফল্যের ধারাটা ধরে রাখতে হবে তাকে। দলকে জেতাতে হবে শিরোপা। সোলারি পারবেন দায়িত্বের প্রথম মৌসুমেই রিয়ালকে শিরোপার স্বাদ উপহার দিতে?