বৃহস্পতিবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৩ ১৪৩২   ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অল্প বয়সে বলিরেখা কেনো হয়?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

নিজের দেহের স্বাভাবিক এজিং প্রসেসটাকে এতটা নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখার কোনো কারণ নেই। তবে এটা কসমেটিক ব্রান্ডের বিজ্ঞাপনগুলোর ফলাফল, যেখানে বলা হয়, তোমার মুখে রিংকেল পড়েছে মানে তোমার জীবন শেষ! তুমি আর কুল কিউট নও! রিংকেল থামাতে না পারলে কোনো আশা নেই! এসব ব্র্যান্ডের ‘ফর্সা ক্রিমের’ রেসিস্ট অ্যাডগুলো কি অলরেডি আমাদের সমাজের যথেষ্ট ক্ষতি করেনি? আর আমরা রখনো তাদের সুযোগ দিচ্ছি। বলিরেখা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আমাদের ‘এজিং প্রসেস’ টাকে মেনে নিতে হবে। মানতে হবে এটা অবশ্যম্ভাবী এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক!

 

আমাদের আগে বিউটিফুল এজিং প্রসেস এর প্রথম ধাপে যেতে হবে, আর তা হচ্ছে, ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। যাতে সঠিক সময়ে সঠিক পর্যায়ে থাকে আমাদের বয়সের ছাপ। অর্থাৎ ২২ বছরে যেন লাফ লাইন্স না পড়ে! আর তাই জানতে হবে অপরিণত বলিরেখার পেছনের কারণগুলো কী?

সূর্যের আলো ত্বকের প্রধান শত্রু। সানস্ক্রিন আপনার যতই তেলতেলে, চিটচিটে লাগুক না কেন! এই অজুহাত কিন্তু আপনার ত্বককে বোঝাতে পারবেন না। সূর্যের রশ্মি এবং চুলার আগুনের ফলে ত্বকের কোলাজেন ব্রেক করে। যে কারণে ত্বক পাতলা হতে থাকে এবং ঝুলে পড়ে। ধিরে ধীরে রিংকেল তৈরি হয়।

ধূমপান: ধুমপানের ফলে মুখের চারপাশে ফাইন লাইন তো দেখা যায়ই। সাথে সাথে এর কেমিক্যালগুলো দেহের ভিটামিন সি লেভেল কমিয়ে দেয়। যা সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার হার কমায়। এর ফলে ডাবল সান ড্যামেজ হয়।

চেষ্টা করতে হবে প্যাসিভ স্মোকিং ও এড়িয়ে চলতে। এটা কিন্তু আরও বেশি ক্ষতিকর। আপনার আশে পাশে এমন কোনো কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাক্তি থাকলে তাকে আপনার আশেপাশে ধূমপান করতে অবশ্যই নিষেধ করবেন।

ফ্যাটবিহীন ডায়েট: আজকাল সবাই তো সবসময় ডায়েটের উপরেই থাকছে। বছরের পর বছর দেহের দরকারি ফ্যাট টুকুও খাচ্ছেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু কি জানেন? স্নেহ বা ফ্যাটের একটা প্রধান কাজ হল দেহের ত্বককে আদ্র বা ময়েশ্চারাইজড রাখা। বাইরে থেকে এই লোশন অই তেল মেখে এটা করা যায় না। শুষ্ক ত্বক খুব দ্রুত ফাইন লাইন বা রিংকেলের শিকার হয়। আর এইজন্য আজকাল খুব কম বয়সি কিশোরী বা তরুণী যারা কোনো সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে নিজে নিজে সারাদিন ‘ডায়েট’ করে তাদের ত্বকের লাবণ্য কমছে, ফাইনলাইন বাড়ছে।

একদিনে ১ বাটি রেড মিট বা মিষ্টি খেয়ে ১০ দিন গাজরের টুকরো খেয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে আপনি নিজের ক্ষতিই করছেন শুধু। এর চেয়ে ডেইলি কনট্রোলড ডায়েট প্র্যাকটিস করুন। প্রয়োজনীয় ফ্যাট অবশ্যই খাবেন। মনে রাখবেন সামান্য জ্ঞানটুকুও যাদের নেই একমাত্র তারাই ‘ফ্যাট ফ্রি ডায়েট’ নামক জিনিসে বিশ্বাস করে।

মেকআপ টেকনিক

আই মেকআপ করার সময় ঠিক কতক্ষণ ব্রাশ অথবা আঙ্গুল দিয়ে চোখের চারপাশে টানা হেঁচড়া করছেন খেয়াল করেছেন কখনো? ৩০ মিনিট প্রায়! একটা জটিল লুকের জন্য। আমাদের আই এড়িয়ার ত্বক একটা টিস্যু পেপার থেকেও বেশি পাতলা, জানেন এটা? একদিন আপনার নরম! কোমল! ব্রাশগুলো দিয়ে এক পিস টিস্যুর উপরে মেকআপ করার ট্রাই করে দেখবেন ৫ মিনিটের আগেই ছিঁড়ে যাবে।

তো তারও বেশি প্রেসার দিয়ে আপনি রোজ আই মেকআপ করছেন, ডাবল ট্রিপল প্রেসার দিয়ে আবার সেই মেকআপ ঘসে তুলার চেষ্টা করছেন। ফাইন লাইন পড়বে না তো কি? মনে রাখবেন, মেকআপ ডেইলি না করলেও চলে। আর যদি করতেই হয় তবে রিমুভ করার জন্য অয়েল ক্লিঞ্জার ইউজ করবেন। তেল আর কাপড় দিয়ে ঘষাঘষি করবেন না। চোখের পাশে প্রতিটা টাচ আপনার ফাইন লাইনের চান্স বাড়াচ্ছে এটা মাথায় রেখে মেকআপ ব্রাশের দিকে হাত দেবেন।

গ্রাভিটি খুবি স্বাভাবিক একটা ফ্যাক্টর। পৃথিবীর স্বাভাবিক গ্রাভিটি আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক এজিং এবং লুজ স্কিনের পেছনে অনেকটাই দায়ি। কমবয়সে আমাদের ত্বকের কোলাজেন আর স্বাভাবিক ইলাসটিসিটির কারণে এই নিম্নমুখী টান অতটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কখন এই গ্রাভিটিও আপনার ২০ বছর বয়সেই ইফেক্ট দেখাতে শুরু করবে জানেন? যখন আপনি দিনে ৬-৭ ঘণ্টা সময় নিচের ভঙ্গিতে বসে থেকে কাটিয়ে দেবেন।

নিশ্চয়ই অনেকে এভাবে বসে বসে ফোন এই আর্টিকেল টি পড়ছেন! যদি তাই হয়, সোজা হয়ে বসুন। নিজের ফোন আই লেভেলে তুলে আনুন। এমনভাবে বসুন যাতে আপনার ঘাড়ে এবং থুতনির নিচে ভাঁজ না পড়ে।

অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যাবহারের কারণে চোয়ালের অংশ, গলা এবং ডাবল চিনের খুলে যাওয়া এবং এই অংশে রিংকেল পড়াটা এখন একটা বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরণের বয়সের ছাপের একটা নামও দিয়েছেন ডাক্তাররা – TECH JOWLS. বিশ্বাস হচ্ছে না? এটা লিখে গুগল সার্চ করুণ। শত শত টেক জাওয়েল স্টোরি পেয়ে যাবেন।

ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন: দুঃখজনক হলেও সত্যি, অতিরিক্ত হাসা, ভ্রু কোঁচকান এবং অন্যান্য ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের ফলে ত্বকে অকালে বলিরেখা পড়ার হার অনেক অনেক বেড়ে যায়। স্পেশালি লাফ লাইন্স, চোখের পাশে ক্রোজ ফিট রিংকেল আর কপালের রিংকেল। কিন্তু, তাই বলে কি সারাদিন মুখ গোমরা করে বসে থাকব? অবশ্যই না! কিন্তু অযথা চোখ কপালে তোলা, ভ্রু কুঁচকে তাকানো এসব কিন্তু কমানোই যায় তাই না? অনেকে থাকেন যাদের চোখের পাওয়ার দিন দিন কমছে। কিন্তু সঠিক চশমা ব্যবহার না করে তারা কষ্ট করে ভ্রু কুঁচকে সারাদিন দেখার চেষ্টা করে জান। এদের একই সাথে ডার্ক সার্কেল আর রিংকেল দুই সমস্যাই হয়।

খেয়াল করুণ আপনি কোনো কারণ ছাড়া কপাল কুচকাচ্ছেন কিনা বা অযথা মুখভঙ্গি করছেন কিনা। একটু সাবধানতাই অকালে রিংকেল প্রতিরোধে কাজে আসে। কে জানে হয়ত এই ভালো অভ্যাসগুলোই অযথা আপনার ভ্রুর মাঝের রিংকেল, কপালের বলিরেখা আর চোখের পাশের ক্রোজ ফিট থেকে আপনাকে ১০ বছর দূরে রাখবে!

ঘুমের অভাব: দেহের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০ টা থেকে দেহের মেরামত কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু আপনি রাত ৩ টা পর্যন্ত ফেসবুকিং না করে থাকতেই পারেন না। ফলে এসব মেরামত কর্মী হরমোনগুলো কনফিউজড হয়ে যায় যে তারা নষ্ট ত্বক ঠিক করবে নাকি জেগে থাকা দেহের কাজকর্মই করতে থাকবে। এভাবে বছরের পর বছর চলার পর একসময় এই হরমোনগুলোর ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আর আপনি পান একটা শুকনো ম্যাড়ম্যাড়ে ত্বক যা ফাইন লাইনে ভর্তি!

শরীরকে ঘুমের জন্য তৈরি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। অতিরিক্ত ফ্লুরসেন্ট আলো স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেল কে নষ্ট করে। তাই নিজের ফনের নাইট লাইট সেটিং ইউজ করবেন, পিসি ইউজ করলে সেটাতেও একই সেটিং চালু করে রাখবেন। এতে ব্রেন ব্লু লাইটের কারণে ঘুমাতে বাধা পাবে না।

সন্ধ্যার পর ফ্লুরোসেন্ট বাটি জ্বালাবেন না। অনলি ইয়েলো লাইট ইউজ করবেন। হাতের কাছে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল রাখতে পারেন। ১ ফোঁটা বালিশে দিয়ে রাখবেন। ল্যাভেন্ডারের ঘ্রান স্ট্রেস কমায়, ঘুমাতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, এক রাতের ঘুম ১০০০০ টাকার কসমেটিক থেকেও ভালো কাজ করে। আর সেই ঘুমটাকে যতটা গভির করা যায় ততই ভালো। এতে একই সাথে সুস্থ দেহ সুন্দর ত্বক, দুইই পাবেন।