রোববার   ২২ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৮ ১৪৩২   ২৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

চোখের মণিতে রঙিন পর্দা ব্যবহারের বিধি নিষেধ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:২১ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

কন্ট্যাক্ট লেন্স শুধু চশমার পরিবর্তেই যে ব্যবহৃত হয় তা কিন্তু নয় বরং বর্তমানে যারা চশমা ব্যবহার করেন তাদের জন্য তো অবশ্যই, এছাড়া বাকি সকলের জন্যও ফ্যাশনের এক অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে কন্ট্যাক্ট লেন্স। বিয়ের কনে থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধবের কোনো জমকালো আড্ডা, সবখানেই ফ্যাশন সচেতন নারীরা ব্যবহার করছেন কন্ট্যাক্ট লেন্স। সাধারণত ডিসপোজেবল সফট লেন্সকেই কন্ট্যাক্ট লেন্স বোঝায়। কন্ট্যাক্ট লেন্স সাধারণত তিন ধরনের হয়- হার্ড, আরজিপি ও সফট কন্ট্যাক্ট লেন্স। চোখের সমস্যার জন্য স্বচ্ছ কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয় এবং এতে পাওয়ার দেয়া থাকে কিন্তু যারা শুধু ফ্যাশনের জন্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তাদের লেন্স হয় ফ্যাশনেবল কন্ট্যাক্ট লেন্স যার মাধ্যমে চোখকে নিজের অভিরুচি অনুযায়ী রঙিন করা যায়। বিভিন্ন লোকেশন, বিভিন্ন আমেজ এবং এর আবহের সঙ্গে নিজের চোখের রঙটাকে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যেই ফ্যাশন সচেতনেরা লেন্স ব্যবহার করে থাকেন।

 

কার চোখে কেমন রঙ:
কার চোখের জন্য কোন ধরনের লেন্স মানানসই হবে, বা তার ত্বকের সঙ্গে কেমন লেন্স মানানসই হবে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সব রঙ সকলের সঙ্গে মানিয়ে যায় না। প্রধানত লেন্স দুই প্রকার হয়। এক ধরনের লেন্স আছে যা আপনার ন্যাচারাল চোখের কালার পরিবর্তন করবে। আর আরেকটি হলো নিজের চোখের কালারকে আরো সমৃদ্ধ করবে এমন কালার যা চোখের ন্যাচারাল কালারকে আরো উজ্জ্বল করবে। আপনার স্কিন, চুলের রঙ, চোখের রঙ অনুযায়ী লেন্সের রঙ নির্ধারণ করতে হবে। এ ব্যাপারে একটি বিশদ ধারণা দেয়া হলো-


যাদের গায়ের রঙ ফর্সা তাদের জন্য: ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হলে সাধারণত সব ধরনের লেন্সেই ভালো লাগে। বিশেষ করে হালকা রঙ।
যাদের গায়ের রঙ শ্যামলা তাদের জন্য: শ্যামলা রঙে সাধারণত গাঢ় রঙ বেশি ফুটে ওঠে। তারা অলিভ থেকে শুরু করে হালকা বাদামি কালারের লেন্স পরতে পারে। এছাড়া কমপ্লিমেন্টারি কালার হিসেবে সব ধরনের রঙই পরতে পারবে।
যাদের চোখের মনি কালো: নীল, বেগুনি, টারকুইজ, হ্যাজেল রঙ তারা ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের চোখের মনি নীল: হ্যাজেল, সবুজ, প্যাসিফিক ব্লু, ওয়ার্ম হানি, জেড গ্রিন এবং টারকুইজ, স্টারলিং গ্রে, জেমস্টোন গ্রিন রঙগুলো মানিয়ে যাবে।
যাদের চোখের মনি সবুজ: টারকুইজ, স্যাফিরে ব্লু, প্যাসিফিক ব্লু, পার্ল গড়ে এবং ওয়ার্ম হানি, এ্যাকুয়া মেরিন রঙগুলো ব্যবহার করুন।
যাদের চোখের মনি বাদামি: পিওর হ্যাজেল গ্রিন, জেড গ্রিন, স্যাফিরে ব্লু এবং ওয়ার্ম হানি, ব্রিলিয়ান্ট ব্লু, অ্যাম্বার রঙগুলো তাদের মানাবে।
যাদের চোখের মনি কালো: ব্রাউন, হ্যাজেল অথবা হানি, এ্যাকুয়া গ্রিন, এ্যামেথিস্ট, ভায়োলেট, এমারেল্ড গ্রিন, মিস্টি গ্রে, চেস্টনাট ব্রাউন রঙগুলো ব্যবহার করুন। 

 

স্বচ্ছ লেন্সেরও চাহিদা রয়েছে। স্বচ্ছ কিংবা রঙিন যেকোনো রঙের মধ্যেই পাওয়া যায় কসমেটিক লেন্স (পাওয়ারবিহীন) বা পাওয়ার লেন্স। তবে বাঙালি মেয়েদের স্কিন টোন অনুযায়ী তাদের সবচেয়ে বেশি মানিয়ে যায় গ্রে রঙের লেন্সে। তাই কোন রঙ ব্যবহার করবে এ ব্যাপারে দ্বিধা থাকলে যে কেউ গ্রে রঙটি বাছাই করতে পারেন প্রথমবার এর জন্য। শুধু রঙ নয়, আপনার চোখের আকারের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট লেন্সটি মানাবে কি না তাও খেয়াল করতে হবে। যাঁদের চোখ একটু ছোট, তারা চোখ বড় দেখাতে চাইলে কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। লেন্সটি আপনার মেকআপের সঙ্গে মানাচ্ছে কি না, সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে। হালকা মেকআপের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরলে আপনার সাজটি ভারী দেখাবে।
 

কীভাবে লেন্স পড়বেন:
যারা কখনো কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেনি তারা মনে করে থাকেন এটি ব্যবহার করা খুব কঠিন। কিছু পদ্ধতি অনুযায়ী পড়লে এটির ব্যবহার খুবই সহজ। নির্দিষ্ট দ্রবণের মধ্যে কন্টাক্ট লেন্স সংরক্ষণ করতে হবে। এটিকে বলা হয় সল্যুশন। এতে লেন্স ভালো মতো ভেজা থাকে। কন্ট্যাক্ট লেন্স কেনার সময়ই দ্রবণ ও লেন্স রাখার ছোট বক্স (ক্লিপ) সহ পুরো সেট কিনে নিতে পারেন। এর ফলে লেন্স সংরক্ষণ করতে সুবিধা হবে। লেন্সের প্যাকেট খোলার পর তা বাম হাতের তালুতে রাখুন। তারপর তার উপর খানিকটা সল্যুশন নিন। ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন লেন্সটি ছিঁড়ে না যায়। এইবার লেন্সটি ডান হাতের তর্জনীতে নিয়ে বাম হাত দিয়ে চোখকে টেনে ধরে বড় করে ডান হাত দিয়ে লেন্সটিকে চোখের ভেতর বসিয়ে দিন। লেন্স পরা হলে বেশ কয়েকবার চোখ বন্ধ করুন এবং চোখ খুলুন।

 

কীভাবে খুলবেন:
বাম হাত দিয়ে চোখ প্রসারিত করে ধরতে হবে। ডান হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে লেন্সটি হালকা ভাবে চাপ দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। লেন্সের বক্সে নতুন সল্যুশন ঢেলে সেখানে লেন্সগুলো রেখে দিন।
 

লেন্স পরার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-
খুব ঘন ঘন লেন্স পরলে চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। যাদের চোখে অ্যালার্জি আছে, তাদের চোখে লেন্স পরলে চোখ লাল হয়ে পানি পরতে পারে। যেহেতু লেন্স প্লাস্টিক অথবা সিলিকন দিয়ে তৈরি, অনেকেরই লেন্স পরলে চোখে জ্বালা পোড়া হতে পারে। লেন্সকে পরিষ্কার ভাবে না রাখলে, আপনার চোখে ইনফেকশন হতে পারে। কেননা চোখ শরীরের অন্যতম সেন্সেটিভ পার্ট। দীর্ঘদিন ধরে লেন্স পরলে চোখের কর্নিয়াতে সমস্যা হতে পারে ।

সাবধানতা:
কন্ট্যাক্ট লেন্সের কারণে চোখে সংক্রমণ হয়। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর জন্য এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে শতকরা ৪৫ ভাগ ব্যবহারকারী লেন্স খোলা ও পরার আগে হাত ধুয়ে নেন না। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে ঘুমাতে যাওয়ার কারণে চোখে সংক্রমণ হয়ে থাকে। এতে কর্ণিয়ার সংক্রমণ ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। রাতে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে চোখের পাতা বন্ধ থাকায় অক্সিজেন সংকটে পড়ে এবং এতে করে চোখ জীবাণু মোকাবেলায় দুর্বল হয়ে পড়ে। 

 


যারা লেন্স ব্যবহার করেন তারা প্রত্যেকেই লেন্সের সল্যুশন ব্যবহার করেন। চোখ থেকে লেন্স খুলে একটি নির্দিষ্ট বাক্সে সল্যুশনে এটি ডুবিয়ে রাখা হয়। সময়ের অভাব অথবা সল্যুশন কম ব্যবহারের জন্য অনেকে জেনেও একই সল্যুশন ২/৩ বার ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু এটি খুবই বিপজ্জনক। কারণ একই সল্যুশন ব্যবহার লেন্সের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে পারে না। তাই লেন্স ব্যবহার এর ক্ষেত্রে প্রতিবার নতুনভাবে সল্যুশন নেয়া জরুরি। লেন্সে সরাসরি পানি দেয়া উচিত নয়। পানিতে অনেক মাইক্রো অরগানিজম থাকে যা পরবর্তীতে চোখের ক্ষতি করে থাকে। অনেক সময় ধরে লেন্স পরে থাকা অথবা অনেক সময় ধরে লেন্স পরে কম্পিউটার বা টিভি দেখা চোখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অনেকক্ষণ একটানা না তাকিয়ে একটু পর পর পলক ফেলুন এতে করে লেন্স শুকিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাবেন। হার্ড কন্ট্যাক্ট লেন্স বেশিক্ষণ ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজনে দৈনিক অল্প সময় (৩-৪ ঘণ্টা) ব্যবহার করা যায়। আরজিপি এবং সফট কন্ট্যাক্ট লেন্স ১৫-২০ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়।