‘ভারতরত্ন’ প্রত্যাখ্যান ভূপেন হাজারিকা পরিবারের
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
আসামের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার পুত্র সরকারের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করে তার প্রয়াত বাবাকে প্রদত্ত ভারতীয় সর্বোচ্চ সম্মান মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সোমবার রাতে আসামের একটি দৈনিকে ভূপেন হাজারিকার ছেলে তেজ হাজারিকা জানিয়েছেন, আমি আসামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ভূপেন হাজারিকার পুত্র তেজ হাজারিকা একটি বিবৃতিতে বলেন, এটি কেন্দ্রের একটি ‘স্বল্পকালীন সস্তা রোমাঞ্চ প্রদর্শনের’ নজির। কেন্দ্র যেভাবে এই বিল পাস করার পরিকল্পনা করেছে তা বাবার বিশ্বাস এবং মতাদর্শের বিরুদ্ধে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাবার নাম এবং তার কথাগুলো সরকার নানা কাজে ব্যবহার করেছে, মানুষকে হতাশ করে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত ব্যথাজনক একটি বিল পাস করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। আমার বাবার সম্পর্কে অসংখ্য মানুষের মনে যা ধারণা, যা বিশ্বাস তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও ভারতীয় জনসংঘ নেতা নানাজি দেশমুখসহ কিংবদন্তী গায়ক ভূপেন হাজারিকাকে এই বছর দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ প্রদান করার কথা ঘোষণা করে সরকার। ২০১৭ সালের মে মাসে ভূপেন হাজারিকার নামে আসামে ব্রহ্মপুত্রের উপর নির্মিত ৯.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ধোলা-সাদিয়া সেতুর নামকরণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভূপেন পুত্র তেজ হাজারিকা বিবৃতিতে বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কোনো আমন্ত্রণ পাইনি, সুতরাং এখানে প্রত্যাখ্যান করার কিছু নেই, এবং দ্বিতীয়ত, এই বিষয়ে কেন্দ্র যে জাতীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে যাচ্ছে তা আসলে স্বল্পকালীন সস্তা রোমাঞ্চ প্রদর্শনের নজির ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি আরো বলেন, আমি এনআরসি নিয়ে আসামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি। ভূপেন হাজারিকা সব সময় আসামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্দোলন করেছেন। তাই এই সম্মান গ্রহণ করতে পারব না। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, ভারত সরকার তাকে যে মরণোত্তর সম্মান প্রদান করতে চেয়েছে, তা আমাদের পরিবার গ্রহণ করবে না। নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভূপেন হাজারিকার জন্ম আসামের সাদিয়ায় ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ৮৫ বছর বয়সে ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই হাসপাতালে তিনি মারা যান। ভূপেন হাজারিকা আসামের মানুষ হলেও তিনি ছিলেন বাঙালিদের ভালোবাসার শিল্পী। তিনি প্রচুর বাংলা গান গেয়েছেন। অসমিয়া, বাংলা, হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। সিনেমায় তিনি বহু নেপথ্য সংগীতও গেয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রচুর গান গেয়েছেন তিনি। তার গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১১ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ পদক’ প্রদান করে।
