বৃহস্পতিবার   ২০ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

খালেদার কারাবাস ও বিএনপির ব্যর্থতা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১৮ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

দিন-মাস পেরিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের হিসাব গড়ালো এবার বছরে। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে তার কারাবন্দী জীবনের এক বছর পূর্ণ হলো ৭ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ এই এক বছরেও চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবি নিয়ে রাজপথে জোরদার আন্দোলন করতে পারেনি দলটি। এমনকি মুক্তির দাবিতে কার্যকর কর্মসূচি দিতেও ব্যর্থ তারা।

 

খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কার্যকর গতি আনা প্রয়োজন দাবি করে নেতা-কর্মীরা জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি হতে এখন পর্যন্ত নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনকে ঘিরে যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। 

 

তারা বলেন, এ সরকারের হাত থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক দাবি (খালেদা জিয়ার মুক্তি) নিয়ে মাঠে নামতে হবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না। 

বিএনপির একাধিক সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতারা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে চেয়ারপারসনের মুক্তি অনিশ্চিত। তারা বলেন, মামলাগুলো ‘রাজনৈতিকভাবে’ মোকাবিলা করার অভিযোগ এনে দলটির কার্যকর কর্মসূচি দিতে হবে। এক্ষেত্রে সাফল্য না এলে শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

কারাবন্দী হলে দীর্ঘ ছয় মাসেও দলের চেয়ারপারসন মুক্তি না পাওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারাও মনে করছেন, খালেদাকে মুক্ত করতে 
হলে রাজপথে নামতে হবে। 

তাদের ভাষায়, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে তিনি জেলে আছেন, তাই তাকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করতে হবে। কঠোর আন্দোলন করতে হবে। 

 

বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে নির্জন কারাগারে ভালো নেই খালেদা জিয়া। বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়েন। ইবাদত-বন্দেগি ও বই পড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে তার।

খালেদা জিয়ার মামলার সর্বশেষ অবস্থা ও কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারেন জানতে চাইলে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সময় লাগবে। কারণ আদালত তো লম্বা সময় দেন। সরকারও কনসার্ন। নির্ভর করবে আদালতের ওপর। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে আইনজীবীদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা কার্যকরভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন করতে পারিনি।

তিনি বলেন, অতীতে ছাত্ররা যেভাবে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যেসব আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বর্তমান ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ বা বিএনপি কেউই আমরা সেভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতাও বলতে পারেন, এতে কোন সন্দেহ নেই।

শামসুজ্জামান দুদু আরো বলেন, কার্যকর আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে চেয়ারপারসনের জনসমর্থনকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি এ কথাটা যেমন সত্য তেমনি কার্যত আন্দোলন গড়ে তুলে তাকে মুক্ত করতে পারব এটাও সত্য। আমরা সেভাবে চেষ্টা করছি। ২০ দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি সম্মিলিতভাবে একটা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হব এটাই প্রত্যাশা করছি।

 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, দলগতভাবে বর্তমানে যেসব কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে এসব কর্মসূচি দিয়ে এ সরকারের কাছ থেকে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।

তিনি মনে করেন, (মহাসচিব ও স্থায়ীকমিটি বাদে) দলের নতুন কাউন্সিল প্রয়োজন। দলের কাউন্সিল করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। তারপর জোরালো কর্মসূচি দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

খালেদা জিয়া এ নিয়ে পাঁচবার কারাবন্দি হয়েছেন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেয়ার পর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে ছেলেসহ গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। 

সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। ওই দিন থেকে পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তার কারাজীবন। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। এখনো তিনি সেখানেই বন্দি আছেন।

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয় দুই বার। এর মধ্যে ৭ এপ্রিল হাসপাতালে নেয়া হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারো কারাগারে পাঠানো হয়। ৬ অক্টোবর তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে ১ মাস ২ দিন পর তাকে ৮ নভেম্বর ফের কারাগারে নেয়া হয়।

খালেদার সাজা বেড়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওইদিন বিকেলে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খালেদা জিয়া খালাস চেয়ে এ সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেন। ৩০ অক্টোবর এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

 

খালেদার ৭ বছরের কারাদণ্ড
এদিকে গত ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা কার হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।