রোববার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৪ ১৪৩২   ০৮ রজব ১৪৪৭

জমতে শুরু করেছে প্রাণের মেলা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার

অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে বইপ্রেমিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে পছন্দের লেখকদের বই কিনতে দেখা গেছে পাঠকদের। অনেকেই শুধু নিজের জন্য নয় প্রিয়জনদের জন্যও কিনছেন বই। কেউ কেউ বন্ধুদের সাথে এসেছেন দলবেধে ঘুরতে।

 

কুড়িগ্রাম থেকে বইমেলায় এসেছে উলিপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সান্তা দাশ প্রিয়া। তিনি জানান, আমার প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল স্যার। তার বই কেনার জন্যই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছি। জাফর ইকবাল স্যারের ৬টি বই কিনেছে। আরো কিছু বই কিনব।

 

মৌলভীবাজার থেকে আসা সংবাদকর্মী মাহবুব রহমান রায়েল বলেন, গতবছরের থেকে এ বছরের মেলা আমার কাছে খুবই প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে। বাংলা একাডেমি থেকে কিছু বই কিনেছি। আরো কিনব।

মেলায় পরিবেশ দেখে খুশি মেলায় আসা বইপ্রেমিরা। নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী  রাসেল বলেন, সাজানো গোছানের ক্ষেত্রে এবারের বইমেলা অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। স্টল, প্যাভিলিয়নগুলো এবারের মেলার সৌন্দর্য্য বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।

মাওলা ব্রাদাসের বিক্রয়কর্মী রাব্বি বলেন, গত দুই দিন ক্রেতারা এসে বই দেখে দেখে গেছেন। তবে আজ গত দুইদিনের ছেয়ে বিক্রি বেশি হয়েছে।
ভাষাচিত্রের বিক্রয়কর্মী তানভীর ও দৃষ্টি বলেন, বিক্রি ভালো হয়েছে। এতো বিক্রি হবে আমারা প্রত্যাশাও করিনি। মানুষের যেভাবে স্রোত বাড়ছে, আশা করছি এবারের বই বিক্রির সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ভাঙবে।

এদিকে বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্ত্বর ঘুরে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় এসে শিশু চত্ত্বরের বিভিন্ন খেলাধুলা সামগ্রি পেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে তারা। কেউ কেউ বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টল ঘুরে কিনেছে বই। শিশুবাজ্যের বিক্রয়কর্মী আক্কাছ খান বলেন, মেলায় শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শিশুদের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে বই বিক্রিও বাড়ছে।

 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি রবিউল হুসাইন এবং আলতাফ হোসেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও ঝর্ণা সরকার। সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, আবদুর রশিদ এবং নূসরাত বিনতে নূর। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), সুনীল কুমার সরকার (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন আবুল কাশেম, দিলদার হোসেন, শামীম রেজা, অদিতি ফাল্গুনী এবং কৌস্তুভ শ্রী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহবুবা রহমান।

মেলার তৃতীয় দিনে নতুন বই: আজ মেলায় ১৩৮টি নতুন বই এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ অফিস। এর মধ্যে গল্প ২০টি, উপন্যাস ২০টি, প্রবদ্ধ ১৫টি, কবিতা ২০টি, গবেষণা ৪টি, ছড়া ৮টি, শিশুসাহিত্য ১০টি, জীবনি ৬টি, মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক ৬টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ২টি, ভ্রমণ বিষয়ক ৩টি, ইতিহাস বিষয়ক ৫টি, রাজনীতি বিষয়ক ৩টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ৩টি, রম্যা ১টি, অনুবাদ ২টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি, অন্যান্য ৮টিসহ মোট ১৩৮। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে আনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মোস্তফা মনোয়ারের গনিত বিষয়ক বই ‘গনিতের গতিময় দাদাগিরি’, মোহিত কামালের উপন্যাস ‘সত্যজানা সন্দেহপালক’, জলতরঙ্গ প্রকাশানী এনেছে সোলায়মান শিপনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘জোনোসাইড’, শোভা প্রকাশ এনেছে তারেক শামছুর রহমানের প্রবদ্ধ ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি’, অনুপম প্রকাশনী এনেছে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘যখন টুনটুনি তখন ছোটাচ্চু, বিভাস প্রকাশনী এনেছে নির্মলেন্দু গুনের ‘ভ্রমন সমগ্র।

 

সোমবারের অনুষ্ঠান: অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন সোমবার মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।