গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস একটি বিশেষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা। মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ ভাগ গর্ভবতী নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন প্রতি বছর। যেহেতু গর্ভের সন্তানের ওপর ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক বেশি সেহেতু গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়।
কারা এই ঝুঁকিতে রয়েছে
যাদের পরিবারের ডায়াবেটিস আছে।
যাদের অতিরিক্ত ওজন।
বয়স ৩৫ এর বেশি অথবা যাদের পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে তাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শনাক্ত করা হয় যেভাবে
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা হয়। এটাকে বলা হয় ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। রোগী খালি পেটে একবার রক্ত দেবে, এরপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে দুই ঘণ্টা পরে দ্বিতীয় বার রক্ত দেবে। খালি পেটে যদি ৬.০ মি.লি. এর বেশি এবং গ্লুকোজ খাওয়ার দুইঘণ্টা পর যদি ৭.৮ মি.লি. এর বেশি হয় তবে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে তখন তাকে অবশ্যই ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
যা মেনে চলতে হবে
১. খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত হালকা ব্যায়াম।
২. সমস্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।
৩. আলু ছাড়া সব শাক-সবজি ও ফল বেশি করে খেতে হবে।
৪. প্রতিদিন প্রোটিন খেতে হবে।
৫. ডাক্তারের নির্দেশ মতো সীমিত পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।
৬. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
৭. এরপরও যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে ইনসুলিন নিতে হবে। ইনসুলিন হচ্ছে গর্ভকালীন সময়ে সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা। সাধারণত গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সন্তান জন্মের পরেই চলে যায়। এরপরে আর ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
জেনে রাখুন
গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে প্রথমাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে। হতে পারে বিকলাঙ্গ, অধিক ওজনের বাচ্চা, গর্ভকালীন অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু, প্রসবকালীন জটিলতা, নবজাতক সন্তানের জন্ডিস, গ্লুকোজ স্বল্পতা, রক্তে মৌলিক উপকরণের অসামঞ্জস্যতাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা।
কখন বুঝবেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে?
যদি খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ ৫.৩০ মি.লি. মোলের নিচে থাকে এবং খাবার দুই ঘণ্টা পরে রক্তের গ্লুকোজ ৬.৭ মি.লি. মোলের নিচে থাকে।
যদি ৩.৫ মি.লি. মোলের নিচে নেমে যায় তখন আমরা বলি হাইপোগ্লাইসেমিয়া। তখন রোগীর মাথা ঘোরায়, ঘাম হয়, অনেক সময় অচেতন হয়ে যায়। এই সময় একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পরিবারের সব সদস্যকে গর্ভবতী মাকে সহায়তা করতে হবে। রোগীকে ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। বারবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ইনসুলিন দেওয়া রোগীর নিজেকেই শিখতে হবে।
পরিবারের সব সদস্যের সহায়তায় একজন গর্ভবতী ডায়াবেটিক মা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। ডায়াবেটিস সঠিক সময় শনাক্ত করা, সঠিকভাবে চিকিৎসা করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের মূলমন্ত্র।
ডা. রায়হানা আমিন, এমবিবিএস, এফসিপিএস, কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস) বাংলাদেশ প্রবীণ হাসপাতাল। আগারগাঁও, ঢাকা। হেলথ ল্যাবস লি. ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার।