স্ট্রেস বা মানসিক চাপের লক্ষণ ও প্রতিকার
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ প্রত্যেকের রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। যে কারণে মানসিক চাপ আমাদের একটা সঙ্গী হয়ে গিয়েছে।
মানসিক চাপ থেকে ক্লান্তি আসে, অবসাদ হয়, অকারণে দুচিন্তা হয়ে থাকে (ফাইল ছবি)
যারা কাজ কর্ম করেন না বা ঘরোয়া বধূ তাদেরও অনেক ধরণের মানসিক চাপ থাকে। বাচ্চাদের পড়াশোনা, স্বামীকে ঠিক সময়ে খেতে দেয়া ও শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা যত্ন এসব নানা কারণে আমাদের জীবনের জটিলতা অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে আমাদের জীবনের স্ট্রেসও বেড়ে যায়।
এ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো মেনে চললে স্ট্রেস অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হবে। স্ট্রেস বিভিন্ন মানুষের বা ব্যক্তি বিশেষের বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে এবং তা বিভিন্ন রকমভাবে প্রকাশ পায়। স্ট্রেস থেকে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে আর সেখান থেকে প্রতিকার কীভাবে পাবেন? সেসব সম্পর্কে জেনে নিন-
স্ট্রেসের কারণে ব্যাক পেইন হতে পারে। আবার শ্বাস কষ্ট হতে পারে। হটাৎ করে শ্বাস কষ্টের কোনো কারণ খুঁজে পান না। এটাও স্টেস থেকে হতে পারে। অনেক সময় ঘাড় বা চোয়াল শক্ত হয়ে যেতে পারে। এটাও মানসিক চাপ থেকেও হতে পারে। অনেক সময় ওজন কমতেও পারে আবার বাড়তেও পারে। অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ঠিক মতো ঘুম হয় না। মানসিক চাপ থাকলে ঠিক মতো ঘুম হয় না। অনেক সময় মাংস পেশীতে টান পড়ে। সেই টানও অনেক সময় স্ট্রেস থেকে হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ মাথা ব্যাথার একটা বড় কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ থেকে মাথার খুব যন্ত্রণা হয়, ডায়রিয়া, বদ হজম বা কনস্টিপিশন ও স্ট্রেস থেকে হতে পারে। মানসিক চাপ থেকে ক্লান্তি আসে, অবসাদ হয়, অকারণে দুচিন্তা হয়ে থাকে।
আপনি যে পরিমাণ খাবার খান, তার থেকে একটু ব্যাতিক্রম হতে পারে। যেমন: হতে পারে আপনি একটু বেশি খাচ্ছেন বা একটু কম খাচ্ছেন। অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হতে পারে। কাজকর্মে অনিচ্ছা হতে পারে, বিষণ্ণতা আসতে পারে। কাজকর্মের মধ্যে আগ্রহ কমে যেতে পারে। চট করে এই ভালো লাগবে আবার এই খারাপ লাগবে। এগুলো মানসিক একটা চাপ থেকে হতে পারে। অনেকে আপনাকে ভুল মনে করতে পারে। কিন্তু এটাও অনেক সময় মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে সম্পর্কগুলোও সমস্যার কারণ হয়ে যাবে। কারো সঙ্গেই আপনি সুস্থভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। এগুলো অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থেকে হয়ে থাকে।
মানসিক স্ট্রেস যদি একটানা হয় বা বহুদিন ধরে হয় তাহলে কী কী মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হতে পারে: মন ও শরীর দুটোর ওপরই মানসিক চাপ ও স্ট্রেস প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপ যদি অনেক দিন ধরে এক নাগাড়ে চলতে থাকে তবে উচ্চ রক্তচাপ, বিষন্নতা, রাগ, কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিস হতে পারে। এমনকি ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়াও আপনি বয়সের আগে অনেক বেশি বৃদ্ধ হয়ে যেতে পারেন মানসিক চাপের কারণে। এমনকি মাইগ্রেণ ও এজমার প্রকোপও স্ট্রেসের কারণে বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে যারা ডায়বেটিসের রোগী তাদের শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা উঠা নামা করে। তাই স্টেস বা মানসিক চাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্ট্রেসকে কীভাবে নিজে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন:
আপনাকে দুচিন্তা ত্যাগ করতে হবে। যে সব বিষয় আপনার হাতে নেই সেগুলো নিয়ে দুচিন্তা করা যাবে না। যেমন: সময় ও পরিবেশ ইত্যাদি। সময়ের ওপর আপনার কোনো হাত নেই। আপনার সময় খারাপ যেতেই পারে। সেটা নিয়ে দুচিন্তা করলে মানসিক স্ট্রেস বাড়বে। সব সময় পজেটিভ চিন্তা করতে হবে। কীভাবে এই সময়টা আপনি ভালোর দিকে নেবেন। সে চিন্তাই করতে হবে। আবার আবহাওয়া নিয়ে দুচিন্তা করা যাবে না। রাস্তায় বের হলে রোদ বৃষ্টি হতে পারে আবার বৈশাখ মাসে কাল বৈশাখী ঝড় হয়। এসব নিয়ে দুচিন্তা করে লাভ নেই। চলাফেরার পথে অনেক ছোট ছোট সমস্যা থাকে সেগুলো আগেই সমাধান করতে হবে। তবে চলার পথের যে কোনো বড় বা জটিল সমস্যা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সমস্যাগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। আর সেভাবেই সমাধান করতে হবে। একটা কথাই মনে রাখতে হবে যে, কখনো এক সঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় না।
বয়স্ক অনেক লোক আছেন যারা কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন দেখলে ভয় পান। ফলে এসব নিয়ে দুচিন্তা হয়। যে আমি তো কম্পিউটার জানি না বা স্মার্ট ফোন ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারি না। এসব নিয়ে দুচিন্তা করা যাবে না। যেটা জানেন না সেটা জেনে নিতে হবে। পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। এসব নিয়ে দুচিন্তা করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। সব বাস্তবতা জেনে রেখে জীবন চালানোর চেষ্টা করতে হবে।
অনেক সময় বড় বড় লক্ষ্য ছোয়ার জন্য আমাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য অনেকে ভাবেন আরো বেশি রোজগার করতে হবে। আরো বেশি কাজ করতে হবে। এসব চিন্তা করে আমাদের মাথায় মানসিক চাপ তৈরি হয়। নিজেকে বাস্তব জায়গায় রেখে যতটা সম্ভব লক্ষ্য তৈরি করবেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ার কোনো দরকার নেই।
খাবার সময় মতো খেতে হবে ও সুষম জাতীয় খাবার খেতে হবে। অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও মেডিটেশন করতে হবে। তবে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবেন।