শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২   ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৬

টাচ স্ক্রিন কাজ করে কীভাবে?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

বর্তমান যুগে টাচ স্ক্রিন মোবাইল ছাড়া চলেই না বেশির ভাগ মানুষের। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছেন, এই স্ক্রিন কীভাবে কাজ করে? মোবাইল অনেক আগে উদ্ভাবন হলেও টাচ স্ক্রিন মোবাইলের প্রথম উদ্ভাবন হয় ১৯৯২ সালে। ওই বছর আইবিএমের সাইমন নামের একটি ফোনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এটি মোবাইলের ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন ধারা নিয়ে আসে। মূলত এটি হচ্ছে প্রদর্শন পর্দা। যেটি স্পর্শ পর্দা হিসেবেও কাজ করে। এই পর্দা সংবেদনশীল, যা এক ধরনের ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এর ওপর আঙ্গুলের প্রিন্ট, নখ বা যেকোনো কাঠি দিয়ে চাপ দিলেই কাজ করে।

বর্তমানে রেজিস্টিভ ও ক্যাপাসিটিভ নামের দুটি টাচ স্ক্রিন বেশি ব্যবহৃত হয়। স্মার্টফোনে যদিও এই রেজিস্টিভ স্ক্রিন ব্যবহার করতে দেখা যায় না, তবু আপনি প্রতিদিন নিজের অজান্তেই হয়তো ব্যবহার করে চলেছেন। বেশ কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথে টাচ স্ক্রিন সুবিধা রয়েছে, সেগুলো রেজিস্টিভ স্ক্রিন ছাড়া আর কিছুই নয়। আঙুল রাখলেই কাজ করবে না ওগুলো, আঙুল রেখে আপনি যদি চাপ প্রয়োগ করেন তবেই সাড়া দেবে স্ক্রিন।

ক্যাপাসিটিভ স্ক্রিনে যেহেতু বৈদ্যুতিক ক্যাপাসিটেন্সকে ভিত্তি করে কাজ করা হয়, সেহেতু আপনাকে কোনো পরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করতেই হবে। এখন মানুষের শরীরের থেকে ভালো মানের পরিবাহী আর কী-ই বা হতে পারে। তড়িৎ পরিবাহী আঙুল রাখলেই তড়িৎ প্রবাহে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে রেজিস্টিভ স্ক্রিন যেহেতু প্রযুক্ত চাপকে ভিত্তি করে কাজ করে থাকে, সেহেতু স্পর্শ করানো বস্তুটি পরিবাহী হোক কিংবা অপরিবাহী স্ক্রিনে পরিমিত চাপ প্রযুক্ত হলে সেটি কাজ করবে।

 

একটি রেজিস্টিভ স্ক্রিনে দুটি স্তর থাকে। বাইরের দিকে যেটি থাকে সেটি হলো রেজিস্টিভ স্তর, আর ভেতরের দিকে থাকে কন্ডাক্টিং স্তর অর্থাৎ তড়িৎ পরিবাহী স্তর। ভেতরের এই তড়িৎ পরিবাহী স্তরটিতে সর্বক্ষণ তড়িৎ প্রবাহিত হয়। বাইরের স্তরটি তৈরি করা হয়েছে পলিইথিলিনের মতো পদার্থ থেকে। এই পলিইথিলিন তড়িৎ অপরিবাহী হওয়াতে এমন ব্যবস্থা। এই দুই স্তরের মাঝখানে থাকে স্পেসার নামক অতিক্ষুদ্র কিছু তড়িৎ অপরিবাহী বস্তু। এদের কাজই হলো দুই স্তরকে পৃথক রাখা, আপনা-আপনি যাতে স্তর দুটি স্পর্শ করে কাজ করতে না পারে। আপনি যখনই বাইরের স্তরটিতে চাপ প্রদান করবেন, স্তরটি সামান্য বাঁকিয়ে যাবে আর ভেতরের স্তরটিকে স্পর্শ করবে। যারা রেজিস্টিভ স্ক্রিন ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন বাইরের স্তরটির এভাবে বেঁকে যাওয়া। বাইরের স্তরটি যখন বেঁকে গিয়ে ভেতরের স্তরটিকে স্পর্শ করবে, ভেতরের পরিবাহী স্তরটিতে ধ্রুবক হারে যে তড়িৎ প্রবাহ চলছিলো তাতে বাধাপ্রাপ্ত হবে স্তরটি। পুরো স্ক্রিন হবে না সেটা, ঠিক যেখানে রেজিস্টিভ স্তর স্পর্শ করানো হয়েছে সেখানেই তড়িৎ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত হয়ে প্রসেসরকে এর অবস্থান জানিয়ে দেবে।

দুটি স্তরকেই ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড যৌগটির আবরণে আচ্ছাদিত করা হয়। এই যৌগটি টাচ স্ক্রিনে ব্যবহারের একটিই কারণ রয়েছে, এটি তড়িৎ পরিবাহী এবং একই সাথে স্বচ্ছ। যদি স্বচ্ছ না হতো তাহলে টাচ স্ক্রিনে হয়তো স্পর্শে সাড়া দিতো। কিন্তু এই স্ক্রিনের নিচে যে ডিসপ্লে স্ক্রিন রয়েছে সেটির আলোকে বাইরে আসতে দিত না। স্বচ্ছ হবার সঙ্গে সঙ্গে এটি তড়িৎ পরিবাহী। সুতরাং টাচ স্ক্রিনের উভয় স্তরকে কাজ করাবার জন্য এই যৌগের আচ্ছাদন সর্বোচ্চ প্রয়োজন ছিল। এরমধ্যে মোবাইলে ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের টাচ স্ক্রিন পুরোটাই নির্ভরশীল মানবদেহের ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসের ওপর। আমাদের দেহে বৈদ্যুতিক চার্জ না থাকলে এই টাচ স্ক্রিন কাজ করত না।

 

টাচ স্ক্রিন কীভাবে কাজ করে তা জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে মোবাইলের স্ক্রিন সম্পর্কে। মোবাইল স্ক্রিনের ওপরের অংশ হচ্ছে স্পর্শ শনাক্তকরণ অংশ এবং এটি এলসিডি স্ক্রিন। এটি মূলত মোবাইলের ব্যাটারি এবং সার্কিটের ওপরের অংশ। মোবাইল স্ক্রিনে দুই স্তরবিশিষ্ট স্ক্রিন থাকে। মোবাইলের ভেতরের সার্কিট এই দুটি স্ক্রীনের ভেতর দিয়ে একগুচ্ছ চিকন তারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে সার্কিট মোবাইলের স্ক্রিনকে সক্রিয় করে। মোবাইলের ওপরে যে গ্লাসটি থাকে, সেটি আসলে মোবাইলকে নানা ধরনের আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখে। তার নিচে যে গ্লাস বা স্ক্রিন থাকে, তার সঙ্গেই ভেতরের তারগুলো যুক্ত থাকে। এখানে মূলত দুটি তারের স্তর থাকে। এই দুটো মিলে একটা গ্রিড প্যাটার্ন তৈরি করে। দুটি তার সব সময় পরস্পর বিপরীতধর্মী চার্জ গ্রহণ করে। যখন আমাদের হাতের আঙুল মোবাইল স্ক্রিনের ওপর স্পর্শ করে তখন স্তরগুলোর মধ্যে চার্জের আদান-প্রদান হয়।

চার্জের সমতা রক্ষার জন্য চার্জের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তৃতীয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হাতের আঙুল। যখন স্ক্রিনে টাচ করা হয়, তখন ওই আঙুলকে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। আঙ্গুলের রক্ত ও কোষ পানি দিয়ে পূর্ণ। এরমধ্যে চার্জিত পরমাণু দ্রবীভূত থাকে। যেমন ধনাত্মক আয়ন সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম আর ঋণাত্মক আয়ন ক্লোরাইড। যখন আঙুলকে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়, তখন ওই ক্ষেত্রটি চার্জগুলোকে প্রস্তুত করতে থাকে এবং পজিটিভ তারের দিকে নেগেটিভ আয়নগুলো চলে আসে এবং পজিটিভ আয়নগুলো দূরে চলে যায়। সব অতিরিক্ত চার্জ আঙুলের মধ্যে সংঘটিত হয়। যেহেতু বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র খুব শক্তিশালী, তাই এটি অনেক চার্জ ব্যাটারী থেকে চুষে নিতে পারে। আঙুলের চার্জ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের খুব কাছ দিয়ে যায়, সেটা ফোনের দৃষ্টিগোচর হয় এবং সেই অনুযায়ী টাচ স্ক্রিন কাজ করে।

 

টাচ স্ক্রিনের চারপাশে কালো দাগ থাকে, এটা সেন্সরকে ঢেকে রাখে। লুকানো সেন্সরগুলো পরিমাপ করে ঠিক কী পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, স্ক্রিনের একটি বিশেষ জায়গায় চাপ প্রয়োগ করলে মোবাইল ফোনটি সে অনুযায়ি কীভাবে কাজ করে? কল করার সময় কীভাবে বুঝতে পারে আমি কল করছি না কাটছি? উত্তর হলো এ ব্যপারগুলো আগে থেকেই ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে প্রোগ্রাম করা থাকে। একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন করার সময় প্রসেসরে এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়।