বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৬ ১৪৩১   ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পথ চলার আদব!

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:২৯ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

ইসলাম শুধু কতিপয় বিধি-বিধানসংবলিত একটি জীবনব্যবস্থা নয় বরং এটি সর্বজনীন একটি জীবনদর্শন।

যার যথাযথ অনুশীলনে মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট প্রত্যেক বান্দাই আলোকিত জীবন গড়তে পারে। প্রতিটি মুসলমানই ইসলামী শরিয়তের হুকুম-আহকাম কমবেশি পালন করার চেষ্টা করে থাকে। আবার দৈনন্দিন চলাফেরায় নিজের অজান্তে বা অসাবধানতায় প্রায়ই অপরের অনিষ্ট করে থাকি।

পথ চলার রীতি, আদব বা শিষ্টাচার এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিটি কর্মেই কিছু সাধারণ রীতিনীতি থাকে। পথ চলা বা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমাদের কিছু প্রাথমিক পর্যায়ের নিয়ম কানুন মেনে চলা আবশ্যক, যাকে আমরা পথ চলার আদব বা শিষ্টাচার বলতে পারি। মহান আল্লাহর জমিনে পদচারণায় আমাদেরকে সাবধানী হতে হবে। কেননা আল্লাহপাক বলেন, ‘এবং তুমি পদক্ষেপ (চলাফেরা) করবে সংযতভাবে।’ (সূরা লুকমান: ১৯)

 

একজন পূর্ণাঙ্গ মুমিনের কথাবার্তায়, চাল-চলনে, ওঠা-বসায়, আচার-ব্যবহারে, পোশাক-আশাকে আদব বা শিষ্টাচার থাকা অত্যাবশ্যক। আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটি তখন এমনভাবে হাঁটব যাতে অপর কারো যাতায়াতে বিঘ্ন না ঘটে। অপরের পথ রুদ্ধ করা মহা অন্যায়।

লক্ষ্য করা যায়, একাধিক লোক পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জটলা পাকিয়ে নিজেদের আলাপ-আলোচনা সেরে নিচ্ছেন বা পরস্পর হাত ধরাধরি করে কথা বলতে বলতে হাঁটছেন। কিন্তু এর ফলে পথচলা হাজারো লোকের যে সমস্যা হচ্ছে, সেদিকে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। হজরত মু’আয ইব্ন জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোকদের তাদের চলার পথে কষ্ট দেয় তার জন্য তাদের অভিশাপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।’ ইসলামের দৃষ্টিতে পথচলার কিছু আদব আছে যা মেনে চললে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যেমন সম্ভব হবে তেমনি রাস্তাঘাটে চলাচলে অন্য মানুষদেরও সুবিধা হবে।

(১) রাস্তায় সবসময় মধ্যম গতিতে চলবে। এত দ্রুতগতিতে চলবে না যে, লোকদের নিকট অনর্থক উপহাসের পাত্র হও, আবার এত ধীরগতিতেও চলবে না যে, লোকেরা দেখে অসুস্থ মনে করে অসুস্থতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। রাসূল (সা.) মধ্যম গতিতে লম্বা কদমে পা উঠিয়ে হাঁটতেন, তিনি কখনো পা হেঁচড়িয়ে হাঁটতেন না।

 

(২) পথ চলার সময় শিষ্টাচার ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে নিচের দিকে দেখে চলবে, রাস্তার এদিকে সেদিকে অনর্থক দেখতে দেখতে চলবে না, এরুপ করা গাম্ভীর্য ও সভ্যতার খেলাফ। রাসূল (সা.) পথ চলার সময় নিজের শরীর মুবারককে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে হাঁটতেন, মনে হত যেন কেউ ওপর থেকে নিচের দিকে নামছে, তিনি গাম্ভীর্যের সঙ্গে শরীর সামলিয়ে সামান্য দ্রুতগতিতে হাঁটতেন, এ সময় ডানে বামে দেখতেন না।

(৩) বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে পা ফেলে চলবে এবং সদর্প পদক্ষেপে চলবে না, কেননা পায়ের ঠোকরে জমীনও ছেদ করতে পারবে না আর পাহাড়ের চূড়ায়ও উঠতে পারবে না। সুতরাং সদর্প পদক্ষেপে চলে আর লাভ কী?

(৪) জুতা পরিধান করে চলবে, কখনো খালি পায়ে চলবে না, জুতা পরিধান করার কারণে পা কাঁটা, কঙ্কর ও অন্যান্য কষ্টদায়ক বস্তু থেকে নিরাপদ থাকে এবং কষ্টদায়ক প্রাণি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেন, অধিকাংশ সময় জুতা পরিধান করে থাকবে, মূলত জুতা পরিধানকারীও এক প্রকারের আরোহী।

(৫) পথ চলতে উভয় পায়ের জুতা পরিধান করে চলবে অথবা খালি পায়ে চলবে, এক পা নগ্ন আর এক পায়ে জুতা পরিধান করে চলা বড়ই হাস্যকর ব্যাপার। যদি প্রকৃত কোনো ওজর না থাকে তাহলে এরুপ রুচিহীন ও সভ্যতাবিরোধী কার্য থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘এক পায়ে জুতা পরে চলবে না, উভয় পায়ে জুতা পরবে অথবা খালি পায়ে চলবে।’ (শামায়েলে তিরমিজি)

 

(৬) পথ চলার সময় পরিধেয় কাপড় উপরের দিকে টেনে নিয়ে চলবে যেন অগোছালো কাপড়ে কোনো ময়লা বা কষ্টদায়ক বস্তু জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে। রাসূল (সা.) পথ চলার সময় নিজের কাপড় সামান্য উপরের দিকে উঠিয়ে নিতেন।

৭) সঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গে চলবে। আগে আগে হেঁটে নিজের মর্যাদার পার্থক্য দেখাবে না। কখনো কখনো নিঃসংকোচে সঙ্গীর হাত ধরে চলবে, রাসূল (সা.) সঙ্গীদের সঙ্গে চলার সময় কখনো নিজের মর্যাদার পার্থক্য প্রদর্শন করতেন না। অধিকাংশ সময় তিনি সাহাবীদের পিছনে পিছনে হাটতেন আর কখনো কখনো নিঃসংকোচে সাথীর হাত ধরেও চলতেন।

(৮) রাস্তার হক আদায় করবে। রাস্তায় থেমে অথবা বসে পথচারীদের দিকে তাকিয়ে থাকবে না আর কখনো রাস্তায় থামতে হলে রাস্তার ছয়টি হকের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।

(ক) দৃষ্টি নিচের দিকে রাখবে।

(খ) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে ফেলে দেবে।

(গ) সালামের জবাব দেবে।

(ঘ) ভালো কাজের আদেশ দেবে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

(ঙ) পথ হারা পথিককে পথ দেখিয়ে দিবে।

(চ) বিপদগ্রস্তকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে।

 

(৯) রাস্তায় ভালো লোকদের সঙ্গে চলবে। অসৎ লোকদের সঙ্গে চলাফেরা করা পরিহার করবে।

(১০) রাস্তায় নারী-পুরুষ একত্রে মিলেমিশে চলাচল করবে না। নারীরা রাস্তার মধ্যস্থল পুরুষদের জন্য ছেড়ে দিয়ে এক পার্শ্ব দিয়ে চলাচল করবে (যেহেতু পুরুষেরা সংখ্যায় বেশি এবং রাস্তার মধ্য দিয়ে চলাচলে তাদের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়) এবং পুরুষরা তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। রাসূল (সা.) বলেন, পচা দুর্গন্ধময় কাদা মাখানো শূকরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া সহ্য করা যেতে পারে কিন্তু নারীর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া সহ্য করা যায় না।

 

(১১) ভদ্রমহিলাগণ যখন কোনো প্রয়োজনবশত রাস্তায় চলাচল করবে তখন বোরকা অথবা চাদর দিয়ে নিজের শরীর, পোশাক ও রূপচর্চার সকল বস্তু ঢেকে নিবে এবং চেহারায় ঘোমটা লাগাবে।

(১২) মহিলারা চলাফেরায় ঝংকার বা ঝনঝনে শব্দ সৃষ্টি হয় এমন কোনো অলংকার পরিধান করে চলাচল করবে না অথবা অত্যন্ত ধীর পদক্ষেপে চলবে, যেন তার শব্দ পরপুরুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট না করে।