‘ওস্তাদ, এইটা নায়িকা, বাইচা গেলে ফাঁইসা যামু’
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:০৩ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
কয়েক দিন আগেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন টিভি অভিনেত্রী অহনা রহমান। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি বাসায় ফিরেছেন। কিন্তু এখনো হাটাচলার জন্য ব্যবহার করেন হুইল চেয়ার।
এদিকে বাসায় গিয়ে কিছুতেই যেন ভুলতে পারছেন না সেই রাতের দুর্ঘটনার কথা। সেদিন আসলে ঠিক কী ঘটেছিল অভিনেত্রী নিজেই সেই ঘটনা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে।
সংবাদ মাধ্যমকে অহনা বলেন, কয়েক রাত ধরে ঘুমাতে পারছি না। ঘটনাটি এমনভাবে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি না।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অহনা বলেন, এক বন্ধুর গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। উত্তরার হাউস বিল্ডিং হয়ে ৭ নম্বরে সেক্টরে পৌঁছালে পাথর বোঝাই ট্রাক হঠাৎ গতি বাড়িয়ে আমাকে ওভারটেক করে। এ সময় আমার গাড়ির সামনের অংশে লাগিয়ে দেয়। আমি গাড়িটা একটু আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে ট্রাকটাকে থামাই।
গাড়ি থেকে নেমে ট্রাক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি- এটি কী করলেন?
চালক উত্তর দেয়- যা করছি ঠিকই আছে।
নিচ থেকে ঠিকমতো কথা বলা ও শোনা যাচ্ছিল না। তখন আমি তাকে নেমে আসতে বলি। কিন্তু সে না আসায় আমি ট্রাকের পা রাখার জায়গায় দাঁড়াই।
এ সময় চালকের পাশে বসে থাকা ১৪-১৬ বছর বয়সী তার সহকারী আমাকে দেখে। ওই ছেলেটি চালককে বলে ওঠে- ওস্তাদ, এইটা কিন্তু নায়িকা, উনি বাইচা গেলে আমরা কিন্তু ফাঁইসা যামু!
একথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে লিজাকে পুলিশে কল দিতে বলি। ঠিক তখনই ট্রাকটা চালক ছেড়ে দেয়। আমি শক্ত করে ট্রাকের দরজায় ঝুলে থাকি। চালক শুরুতে আমাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর সে ট্রাক চালিয়ে বিভিন্ন ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে আমাকে বাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে।
আমি যে কীভাবে তখন শক্ত করে এই ঠাণ্ডার মধ্যে ট্রাকের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তা এখন আর বলতে পারব না। ওরা ট্রাকটা নিয়ে সোজা ১২ নম্বর সেক্টরের আগে রেডিকেল মেডিকেলের সামনে নিয়ে যায়।
এর মধ্যে চালক তার সহকারীকে একটি জায়গা দেখিয়ে বলে- এইটারে গাড়িসহ এখানে ফালায়া দিমু। বাঁচলে বাঁচল, মরলে তো গেলই। তোরে যখন বলব তখন দৌড় দিবি।
আমি তাদের কথাবার্তা সবই শুনতে পারছিলাম। ওই সময় আমি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম আর আমার মায়ের মুখটা মনে পড়ছিল। অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম যে, একটু পরই মরে যাব।
হঠাৎ ট্রাকটা হার্ডব্রেক করে একটি সুপারশপের পাশে রাখা কাচের ওপর ফেলে দেয় আমাকে। আমার সৌভাগ্য যে কাচের ওপর পড়িনি।
