ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের ৫০ বছর আজ
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৩১ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের ৫০ বছর আজ। ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তা ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের একেকটি অংশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির
সনদ ৬ দফা, ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। ২৪ জানুয়ারি অবিচল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক গণঅভ্যুত্থান।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। ৮ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও মোজাফফর ন্যাপসহ আটটি রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)।
২০ জানুয়ারি সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিল করে ছাত্রসংগ্রাম কমিটি। এ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা আসাদউজ্জামান নিহত হন। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি গণজাগরণ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।
১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর এবং ছুরিকাঘাতে রুস্তুম নিহত হলে ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিনটি গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেন। স্বায়ত্তশাসনসহ ৬-দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ৬-দফা ঘোষণার পর স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয় এবং সারা পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা, পরবর্তীকালে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। ফলে আরও তীব্রতর হয় স্বাধিকার আন্দোলন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনকে বন্দি করে। এ মামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন গড়ে তোলে।
