শুক্রবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৪ ১৪৩২   ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ভারতের শেষ গ্রামের হিরো ‌`বাংলাদেশের মুশফিক`

খেলা ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার

ভোরে উঠে হালকা খাবার খেয়ে শুরু করলাম ট্রেকিং, লক্ষ্য পুলনা ভিলেজ। আসার সময় ঘোড়ায় আসলেও এবার ট্রেকেই বিশ্বাসী থাকলাম আমরা। প্রায় ১১টার মাঝেই আমরা ফিরে আসি ‘গোবিন্দঘাট’। এবার যা হবে সবই বোনাস!

দ্রুত জীপ ঠিক করে নিলাম। লক্ষ্য বদ্রিনাথ মন্দির হয়ে মানা। কোথাও রাস্তার উপর দিয়েই বয়ে যাওয়া পাহাড়ি ঝর্ণা, আবার কোথাও পাহাড় ধ্বসের কাঁদাময় রাস্তা, সব মিলিয়ে গোবিন্দঘাট থেকে মানা যাওয়ার রাস্তাটা ছিল এখন পর্যন্ত আমার দেখা সেরা রাস্তা। প্রথমে প্রায় ১০,৮০০ফুট উপরে অবস্থিত এই বদ্রিনাথ মন্দির।

এরপর ছুটে চলা ভারতের শেষ গ্রাম ‘মানা’-এর উদ্দেশ্যে। একপাশে পাহাড় এবং অন্যপাশে অলকানন্দি নদীর রুপ দেখতে দেখতে কখন যে চলে গেলাম গ্রামের প্রবেশমুখে টের পাওয়াই দায়। সরুরাস্তা হওয়ার গাড়ি বাইরে রেখেই ঢুকে পড়লাম গ্রামটিতে। সাজানো গুছানো এই পরিষ্কার গ্রামে প্রায় ৫০০-৬০০জন মানুষ বসবাস করেন। বছরের ছয় মাস বরফে ঢেকে থাকায় বাসিন্দারা তখন গ্রাম ছেড়ে চলে যায় নিচের শহর এলাকায়। অভাবের ছাপ তাদের মাঝে দেখা গেলেও হাসিমুখগুলো তা বুঝতে দেয়নি আমাদের। বেশকিছু সময় ঘুরে দেখে নিলাম পুরো গ্রামটি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বিশাল দুই পাহাড়ের মাঝে দিয়ে ছুটে চলা ঝরনাটি। ভারতের শেষ কফি হাউস থেকে কফি খেয়ে আবার রওনা হলাম আমরা জসিমঠের উদ্দেশ্যে। প্রায় বিকেল ৪টার দিক ফিরে আসি পাহাড়ি জসিমঠ শহরে।

মানা গ্রামের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় মুশফিক

সময় নষ্ট না করেই চলে যাই জসিমঠ-ওলি-জসিমঠ কেবলকার ষ্টেশনে। জীবনের প্রথম কেবলকার যাত্রা, যেতে হবে ৩.৯৬ কি.মি.। অলি হচ্ছে ভারতের চিত্তাকর্ষক ঢাল এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে একটি জনপ্রিয় স্কিইং গন্তব্য। যদিও ওটার সময় আরো কিছু দিন পর থেকে, তবে প্রচুর ঠাণ্ডা শীত আসার পূর্বেই অনুভব করেছিলাম অলিতে। কনকণে শীতল বাতাসে খুব কষ্ট হয়েছে। হালকা পাকরা এবং নুডুলস খেয়ে আবার রওনা দিলাম জসিমঠের উদ্দেশ্যে। উঠার থেকে নামাটা ছিল খুবই মজার।

অলি থেকে জসিমঠ নেমে আসার পথে মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে দুনিয়াতে নেমে আসছিলাম সাথে অনুভব করছিলাম বুকের মাঝে প্রায় ১০হাজার ফুট থেকে ৬২৫৩.৪ ফুটে নেমে আসার একটি চাপ। উপর থেকে জসিমঠ এবং এলিফেন্ড হিল দেখতে এক কথায় অসাধারণ, ভাবছিলাম এগুলো যখন শীতে বরফে ঢেকে থাকে তখন দেখতে না আরো কতো সুন্দর লাগে! ভাবতে ভাবতে চলে এলাম জসিমঠ শহরে আবার।

জসিমঠ-এর কী অসাধারণ রূপ

রাত নামার আগেই আবার পুরোনো শঙ্কা উঁকি দেয়া শুরু হলো সবার মনের মাঝে। দুই-তিনটা দিন ভালো থেকে আবার বৃষ্টির আনাগোনা। সন্ধ্যা থেকে শুরু মুষলধারে বৃষ্টি, আবার পাহাড় ধসের আশঙ্কা! এরই মাঝে খবর আসতে শুরু করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির।

ভোররাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টির খবর শুনে শঙ্কাময় মনে ঘুম থেকে উঠি রুমের জানালা দিয়ে এলিফেন্ড হিলের রুপ দেখতে দেখতে। পুরো ট্রিপে আমাদের উপর থাকা স্রষ্টার অদৃশ্য রহমতের কথাকে ভরসা করে রওনা হলাম উত্তরখন্ডের রাজধানী দেরাদুনের লক্ষ্যে। সারাদিন লেগে গেল এই আঁকাবাঁকা পথে, সাথে ছিল একটু পর পর পাহাড় ধ্বসের চিহ্ন! তবে দিনে আর বৃষ্টি না হওয়ায় বেঁচে যাই।

ঐ রাতে দেরাদুনে হালকা হাঁটাহাঁটি, তবে ভারি খাবার খেলাম অনেক দিন পর। মনে হয়েছিল দেরাদুন শহরের ধুনদরবার নানা রকম কাবাব এবং বিরয়ানী নিয়ে অপেক্ষায় ছিল আমাদের। বাংলাদেশি বুঝতে পেরে হোটেলের ম্যানেজার বের হয়ে এসে আমাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলতে এগিয়ে এলেন, দিক নির্দেশনা দিয়ে দিলেন পরের দিনের ঘুরাফেরার ব্যাপারে। শহরের ওই অংশটা ছিল মুসলিম এলাকা। আমাদের পেয়ে সবাই তাদের মনের কথা বলার চেষ্টা করেই গেল।

দেরাদুনের একটি ঝরনা

মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, তামিম কিংবা মুস্তাফিজ, পানওয়ালা থেকে বড় হোটেল মালিক এক এক জনের হিরো এক এক জন। তবে মুশফিক-ই এই এলাকার সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড়! সবার কথা একটাই ওদের কথা যাতে আমাদের হিরোদের জানাই। বাস্তবে দেখা না হলেও ধন্যবাদটা জানতে পারব না জেনে, গর্বিত মনে নিজে নিজে অন্তরালে ধন্যবাদ দিয়ে গেলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সে রাতে দেরাদুনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে।

সকালে আলসেমি ছাড়ছিলই না আমাদের, যেন চলছেই না আর। উঠে এবার আমাদের লক্ষ্য দেরাদুনের আশেপাশে এবং পাহাড়ের রানী মুসৌরী ঘুরে দেখা। বছরের বেশীর ভাগ সময় মেঘের বনে ডুবে আর শীতে তুষার চাঁদরে ঢেকে থাকে এই শহর। ঝর্ণা, মুসৌরী লেকসহ বেশ কিছু জায়গা মেঘে ভেসে ভেসে ঘুরে বেড়ালাম ওই দিন। মেঘে ভেসে নরম আইসক্রিম খেতে খেতে শহরের আঁকাবাঁকা পথে হেঁটে বেড়ালাম। সন্ধ্যায় আবার দেরাদুন শহরে ফিরে সবার ইচ্ছে হলো সিনেমা দেখার। দেখে নিলাম ‘স্ত্রী’ ছবিটা। রাতে স্ত্রীর সেই ভূতকে সাথে নিয়ে ২য় দিনের মত জম্পেশ খাবার-দাবার হলো সেই মুসলিম অঞ্চলে।

সকালের দেরাদুন শহরটা একবারে চুপচাপ শান্ত দেখে খুব ভাল লাগলো। শহর থেকেই দূরের বিশাল বিশাল পাহাড়গুলো দেখা যায়। ক্লান্তির ঘুম থেকে উঠে ইন্ডিকো-এর ফ্লাইটে চলে যাই দিল্লী। কিন্তু ৩ ঘণ্টার যাত্রা বিরতি কলকাতা যাবার পথে এখানে। আশেপাশে যাওয়ার সাহস করেনি কেউ। জ্যামের শহরের জ্যামের ভয়ে! কিছুক্ষণ করে আবার ইন্ডিকো দিয়ে চলে এলাম কলকাতা। বিমান থেকে কলকাতার রাতের রুপটা মনে হচ্ছিল এই বিয়ে বাড়ির দেওয়াল! লাইটিং করা ছিল হয়েক রঙের আলোতে।