হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র চায় অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:০০ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনগুলোয় করার দাবি অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের। শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ নিশ্চিত করতেই তাদের এই দাবি।
তবে ছাত্রলীগ ও জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ হলেই নির্বাচনের কেন্দ্র করার পক্ষে। অন্যদিকে নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের মত এসেছে। বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বক্তব্য এসেছে ছাত্রলীগ থেকে।
এর বাইরে নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোট কেন্দ্রগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
সোমবার ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্লাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদ’র সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সভা চলে। সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও ছাত্র সংঘগুলোর নেতারা গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর পরিবেশ পরিষদের প্রথম বৈঠক হয়। ১০ জানুয়ারি ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামন। এ সময় প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী।
এ সময় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই অংশ, জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের দুই অংশ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র আন্দোলনসহ ১৪টি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্র জানায়, সভায় ছাত্র সংগঠনের নেতারা প্রশাসনের উদ্দেশে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। ৪ ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকের বড় অংশজুড়েই ছিল নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার যোগ্যতার বিষয়টি। ছাত্রলীগ আলোচনায় বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য এসেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতা ও ভোটার নির্ধারণে বয়সসীমা ৩০-এর মধ্যে করার দাবি জানান।
অন্যদিকে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কেবল নিয়মিত ছাত্রদের ভোটার করার পক্ষে মত দেন। ছাত্রদলের বক্তব্যে গুরুত্ব পেয়েছে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান, হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ডাকসুর জন্য যারাই ফি জমা দেয়, তাদেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দান, ক্যাম্পাসকে সব শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ করা এবং ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন। ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ভোট কেন্দ্র ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে আনা এবং যারা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য ফি দেন, তাদের ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের পক্ষ থেকে ভোট কেন্দ্র হলে না করে ক্যাম্পাসে করা ও নির্দিষ্ট একটি দল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা না রেখে সব দলের শিক্ষকদের সেখানে রাখার আহ্বান জানানো হয়। সূত্র আরও জানায়, মতবিনিময়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা চান।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ত্রুটিমুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে। মতবিনিময় শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘসময় গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে সংশোধনী কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তা সিন্ডিকেটে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
৩১ মার্চকে সময়সীমা ধরেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে আচরণবিধি প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সে বিষয়টি দেখবেন। সব বিষয় মূল্যায়ন করেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে যারা ভোট দিতে পারবেন, তারা প্রার্থীও হতে পারবেন- এই বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, এই ডিজিটাল যুগে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম হলকেন্দ্রিক তাই ভোট কেন্দ্র হলে করা হোক। সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে কিন্তু ছাত্রদলকে ইতিবাচক ধারায় আসতে হবে। তাহলে তারা সহাবস্থান করতে পারবে।
বয়স নিয়ে রাব্বানী বলেন, যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। তবে তাদের বয়সসীমা ত্রিশ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল অন্তর্কোন্দলের কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। তাদের মধ্যে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা প্রভোস্টের মাধ্যমে হলে থাকলে আমাদের সমস্যা নেই।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থানের দাবি করা হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে যারা ডাকসুর ফি প্রদান করেন, তাদের সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করতে হবে। পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
তার পাশে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগ নেতারা, আমাদের নেতাকর্মীদের, ক্যাম্পাসে এলে, বিভিন্ন সময় মারধর করে। তিনি ডাকসুর সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রী করারও দাবি জানান। এ সময় ছাত্রদল নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যাবে বলে ঘোষণা দেন আকরাম হোসাইন।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ভোট কেন্দ্র ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছে। আমরাও একই দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে, যারা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য ফি দেন তাদেরকে ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভোট কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি। যাতে সবার জন্য সহাবস্থান থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আচরণবিধি কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি যারা এই দুই কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই একটা দলের। আমরা চাই সব সংগঠনের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা হোক।
সভা শেষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বের হন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের হাত ধরে ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও দলীয় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনা দেখা যায়। পরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ এই দুই নেতা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন।
এ ছাড়া উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ফেরার পথে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দেখলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভিপি-জিএস তো তোমারই হবা, দেইখো ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখো না।’
এ সময় সেখানে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ তৈরি হয়। পরে স্মৃতি চিরন্তনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে বিদায় জানান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পাশে দেখা যায়নি।
প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার যোগ্যতা ইস্যুতে ছাত্রলীগে ভিন্ন মত সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আমরা তার পক্ষে থাকব।