ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প-২: আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:০৬ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

সালটা ২০১৬। সবকিছুই রঙীন আমার চোখে তখন। কেননা, আসছে শীতেই আমার বিয়ে। বর আমাদের পাশের এলাকাতেই থাকে। চাইলেই যখন-তখন তার সঙ্গে দেখা করতে পারি, ঘুরতে যেতে পারি।
বিয়েটা পারিবারিকভাবে ঠিক হলেও পাত্রের সঙ্গে আমার মানসিকতা দারুণ মানিয়ে যাচ্ছিল। কে জানে হয়তবা সেই লোকটা মানিয়ে যাবার অভিনয় করতো শুধু!
এর মাঝে একদিন ভোরে ঘুম ভাঙে আব্বুর গোঙানীর শব্দে। মেডিকেলের স্টুডেন্ট হবার দরুণ বুঝতে পারি আব্বু স্ট্রোক করেছেন। যথাসম্ভব দ্রুত হসপিটালাইজড করাই তাকে।
তিনদিন পর আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যখন শুনি আব্বুর এক পাশ সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। আমার পরিবারে আব্বুই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আর সম্পদ বলতে আমাদের কেবল ঢাকায় ছোট্ট একটা বাড়ি।
আমি, আম্মু, ছোট ভাই যেন অকুল পাথারে পড়লাম। ঠিক করলাম যতই কষ্ট হোক বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যাবো। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে ভীষণ দূর্বল হয়ে গিয়েছি আমরা ততদিনে।
তখন আমরা আমার বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখা অর্থ, গয়না খরচ করা শুরু করে দিলাম। মাস দুয়েক পরে হঠাৎ করে পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো।
মা সিদ্ধান্ত নিল ঘরোয়াভাবে বিয়ে পড়িয়ে দেবেন। তখন পাত্রপক্ষকে জানানো হলো আমরা এই মুহুর্তে তাদেরকে কিছুই দিতে পারবো না। এটা শুনে তারা খুব খেপে গেলেন।
বলতে লাগলেন, আমরা ছোটলোক, মেয়ের বিয়েতেও খরচ করতে চাই না। অবশেষে তারা জানালেন, যদি আমাদের বাড়ির এক অংশ পাত্রের নামে লিখে দেয়া হয় তবে তারা রাজী আছেন।
হতাশ আমি ততদিনে হবুবরকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তার সঙ্গে দেখা করে বললাম আমাদের কিছু বছর সময় দিতে। তখন সে খুব অদ্ভুতভাবে জবাব দিল যে তার ভাইয়েরাও বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে অনেক কিছু পেয়েছে।
কাজেই সেও আশা করে আমরা তাকে যেন অনেক কিছু দেই, নতুবা এই বিয়ে সম্ভব নয়। ঠিক সেসময় আমার ভেতর কেমন যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। আমি আংটি ফেরত দিয়ে চলে আসলাম।
এক সপ্তাহ ঘরে বন্দী থেকে নিজে কেবল মোটিভেশনাল বই পড়লাম। এবার আমি বাইরের দুনিয়াকে চিনতে লাগলাম। সারাদিন ক্লাসের পর টিউশন করাতাম, রাতে বাসায় ফিরে পড়তাম।
অনেকটা শক্ত হয়ে যাওয়ার পর খবর পেলাম সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার আপন মামাতো বোনের বিয়ে। তার বিয়েতে গেলাম, আনন্দ করলাম, রাতে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে পরদিন থেকে আবার ব্যস্ত হয়ে গেলাম বাস্তবিক জীবনে।
আমার উপার্জনে আমার বাবা এখন সুস্থ। আলহামদুলিল্লাহ আমি ৩৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার ভাই এখন রুয়েটে পড়ছে।