গুণী ও শক্তিমান অভিনেতার সন্তানরা কে কোথায়?
নিউজ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৪৫ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
ফ্লিম পাড়ার একেক জন জাঁদরেল অভিনেতা। এ পাড়ায় নামেই এখনো তাদের কঠিন অবস্থান। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন অনেকেই। আবার ব্যক্তিগত ও অন্য নানা কারণে রয়েছেন পর্দার আড়ালে। আজ পাঠকদের জানাবো এমন কয়েকজন গুণী ও শক্তিমান অভিনেতার সবশেষ অবস্থা-
কবি আল মাহমুদ সাহসী কবি আল মাহমুদ। তিনি দুই সন্তানের জনক। এক সময় এই সন্তানদের জন্য তিনি বনানীর বাড়ি বিক্রী করে সন্তানদের বিদেশে পাঠান। এরপর আর ফিরে আসেনি তার দুলালেরা। কবি আজ নিজ গ্রামের বাড়িতে বিছানায় পড়ে রয়েছেন। দেখার কেউই নেই।
এর আগে শোনা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে একটি বাড়ি দিয়েছিলেন কবিকে উপহার। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে কবি জানিয়েছেন, বনানীতে একটা জমি দিয়েছিলে এরশাদ। কবি নিজে সেখানে বাড়ি করেছিল। বাড়িটা করেছিলেন তিনি লোন করে।
অভিনেতা আনোয়ার হোসেন
বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। তিনিও পাঁচ সন্তানের জনক ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি জীবনের সব আয়, ব্যয় করেছেন সন্তানদের পেছনে। বড় ছেলে সুইডেন, তার বাকি তিন ছেলে ও এক কন্যা থাকেন আমেরিকায়।
এই পাঁচ সন্তানদের অবর্তমানে তিনি একা বাসায় ধুকে ধুকে মারা গেলেন। ১টি সন্তানও এলেন না বাবাকে দেখতে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো জীবনের শেষ বেলাতেও তিনি জীবিকার তাগিদে অভিনয় করে গেছেন।
অভিনেতা প্রবীর মিত্র
সারাদিন বাসায় বই, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশন দেখেই দিন কেটে যায় অভিনেতা প্রবীর মিত্রের। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটে যেতেন কাকরাইল ফিল্ম পাড়ায়। চা খেতেন, সবার সঙ্গে আড্ডাও মারতেন। এখন সেটাও পারেন না, কারণ শরীর ভীষণ খারাপ। যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করেছেন, সেখানকার মানুষজন দু-একজন ছাড়া কেউ খোঁজখবরও নেন না তার।
এদিকে, প্রবীর মিত্রের স্ত্রী বেঁচে নেই ১৫ বছর। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্ব সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৭ বছর বয়সী এ অভিনেতার। তার এক মেয়ে ও তিন ছেলে। ছোট ছেলে ২০১২ সালে ৭ মে মারা যান।
জানা যায়, বর্তমানে বাকি সন্তানেরা ঠিকমতো খোঁজখবর নেন না তার।
অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান
আরেক জাঁদরেল অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ তার পুরানো ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ লেনের বাসায় খুন হন নিজের ছেলে এ টি এম কামালুজ্জামান কবির। তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন তারই ছোট ছেলে এ টি এম খলিকুজ্জামান কুশল।
হত্যাকাণ্ডের পর এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছোট ছেলে কুশলকে আসামি হিসেবে সনাক্ত করে খুনের বর্ণনাও দেন বাবা। ছেলে কুশলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর এদিকে তিনি এখন পুরো বাড়িতে একা থাকেন। অভিনয়ও কমিয়ে দিয়েছেন।
তাছাড়া নানা সময়ে মৃত্যুর গুঞ্জন শোনা গেছে এ অভিনেতার। হয়তো একদিন এভাবেই সত্যি সত্যি একবুক কষ্ট নিয়ে তিনিও চলে যাবেন। তবে তাকেও এখন দেখার কেউ নেই।
অভিনেত্রী ববিতা
অভিনেত্রী ববিতা। তাকে দেখে মন্দ আছেন বলবে কে? একমাত্র ছেলে অনিক কানাডাতে পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন তিনি। দেশে খুব কম আসা হয় ছেলের। এদিকে, ববিতার বিয়ে হয়েছিল ব্যবসায়ী ইফতেখারের সঙ্গে। সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র দুই বছর। বর্তমানে ববিতা একা থাকেন। মাঝেমধ্যে ছেলের কাছে গিয়ে থাকেন।
অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ
অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। তার বয়সের প্রায় অর্ধেক সময়ই আমেরিকায় থাকতে হয়। কারণ সেখানে তার স্ত্রী তাহিরা দিল আফরোজ ও একমাত্র মেয়ে ডা. রুবায়না জামান থাকেন। তাই স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রায় ছুটে যান আমেরিকায়।
কিন্তু মন তো টেকে না। ফিরে আসতে হয় বাংলাদেশে, অভিনয়ের মঞ্চে। তাই গিয়ে আবার ফিরেও আসেন রাইসুল।
সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান
অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম ও স্ত্রী লায়লা হাসান দম্পতির তিন সন্তানের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ভিকারুননেসায় শিক্ষকতা করে আর মেজ মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর কানাডা চলে গিয়েছেন।
এদিকে, ছোট ছেলে থাকেন আমেরিকাতে সেখানে তিনি পড়াশোনা করার পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন। তবে ৮৩ বছর বয়স্ক সৈয়দ হাসান ইমামও মাঝেমধ্যে বলেন, সন্তানদের খুব মিস করি। একসঙ্গে আর থাকা হবে না! মেয়ে থাকে জামাইর সঙ্গে। আমরা তো সেই দুই বুড়ো-বুড়ি থাকি মগবাজারের বাসায়।
