সোমবার   ০৪ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২   ০৯ সফর ১৪৪৭

চীনের দুর্বল অর্থনীতি অ্যাপলের দুর্দিনের জন্য দায়ী?

নিউজ ডেক্স

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:২৬ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে খারাপ সময় পার করছে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে ৯০০ কোটি ডলার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আইফোন বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য চীনের অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপল যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য চীনের অর্থনীতি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ কোনোভাবেই দায়ী নয়। অ্যাপলের বড় সমস্যা হলো, স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে তাদের পণ্য ভোক্তারা কীভাবে গ্রহণ করছেন, তা বিবেচনায় না নেয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আইফোন এখনো ইউনিক ডিভাইস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যে কারণে বাজারটিতে আইফোনের চাহিদা বাড়ছে। একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা আইফোনের নতুন সংস্করণের জন্য অধিক থেকে অধিকতর মূল্য পরিশোধেও দ্বিধাবোধ করছেন না। তবে বহির্বিশ্বে ভোক্তার প্রবণতায় পরিবর্তন এসেছে। যেটা বিবেচনায় নেয়া উচিত অ্যাপলের। কিন্তু অ্যাপল স্থানীয় বাজারের বাইরের ভোক্তাদের চাহিদা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আইফোন স্মার্টফোন বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। তা এক দশক আগের কথা। এখন এ কথার বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকটাই অদৃশ্য হতে চলেছে। বেশকিছু অ্যাপল পণ্যপ্রেমী প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইসকে ইউনিক মনে করছেন। তবে মোবাইল ডিভাইসকেন্দ্রিক সৃজনশীল উদ্ভাবনে অন্য স্মার্টফোন নির্মাতারাও পিছিয়ে নেই।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের অবস্থা এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি আইফোন ডিভাইসের জন্য সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে আইফোন ডিভাইস নিয়ে আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে অ্যাপলকে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এখনো পুরনো ব্যবসা কৌশল নিয়েই এগোনোর চেষ্টা করছে। অনেকটা পুরনো পণ্য নতুন মোড়কে উন্মোচন করবে এবং গ্রাহকরা ব্র্যান্ড বিবেচনায় অধিক মূল্য পরিশোধ করবে। পুরনো ব্যবসা কৌশলই আইফোন বিক্রি প্রবৃদ্ধি কমার কারণ।

ইনভেস্টিং ডটকমের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক হারিস আনোয়ার বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে মৌলিক যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিয়েছে, তা মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে পরবর্তী ধাপের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হবে অ্যাপল। বিশেষ করে, একজন হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী আইফোনের জন্য কেন চড়া মূল্য পরিশোধ করবে, তা অ্যাপলকে নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী এখন সাশ্রয়ী ডিভাইস সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যে কারণে চীনা হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ডগুলোর বাজার দখল বাড়ছে। কাজেই এক হাজার ডলার বা তারও বেশি মূল্যের আইফোন ডিভাইসকে ভোক্তারা কীভাবে দেখছেন, তা বিবেচনায় নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর স্মার্টফোন বাজার পরিপক্ব হয়ে উঠেছে। এসব বাজারে প্রবৃদ্ধির সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ দুই বাজার ভারত এবং চীনের পাশাপাশি ব্রাজিল ও আফ্রিকায় ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। অবশ্যই হাজার ডলার মূল্যের ডিভাইস দিয়ে উদীয়মান এ বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধির আশা করা যায় না।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন-ভারতের মতো ক্রমবর্ধমান বাজারগুলো ঘিরে অ্যাপলের এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। যে কারণে সাশ্রয়ী ডিভাইস দিয়ে এশিয়ার নির্মাতারা এসব বাজারে ক্রমান্বয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে।

ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাপল প্রথম কোম্পানি নয়, যে কিনা শুরুতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি পেয়ে এখন এসে খারাপ সময় পার করছে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে সিসকো সিস্টেমস এ রকম পরিস্থিতিতে পড়েছিল। এন্ট্রি লেভেলের ভোক্তাদের গুরুত্ব না দেয়ায় জুনিপার নেটওয়ার্কস এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বাজার দখল হারায় প্রতিষ্ঠানটি। একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল তত্কালীন রিসার্চ ইন মোশন নামের মার্কিন কোম্পানি। এখন ব্ল্যাকবেরি নামে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠান। বৈশ্বিক হ্যান্ডসেট বাজারে এক সময় রমরমা ব্যবসা ছিল ব্ল্যাকবেরির। গ্রাহক চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার কারণে ডিভাইস বাজার থেকে হারিয়ে যেতে চলেছে ব্ল্যাকবেরি। এর মালিকানাও পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার।

বিশ্লেষকরা আইফোন বিক্রি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন বাজারের অবস্থা ও গ্রাহক চাহিদা বুঝে সঠিক পণ্য সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন।