বছরে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু
নিউজ ডেক্স
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৫৬ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার

খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতি ৭ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে জীবনযাপন করে।
উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরিকৃত খাদ্য, প্রসেস্ড ফুড ও একাধিকবার জারিত তেলে তৈরি খাবারে উচ্চমাত্রার ‘ট্রান্সফ্যাট’ থাকে। যার ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে শিশুদের ওপর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে খাবারে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ২ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশের প্রস্তুত করা খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। সংস্থাটি জানায় খাবারে ২ শতাংশের বেশি ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৩ ভাগ বেশি।
ট্রান্সফ্যাট রয়েছে এমন অনেক খাবার ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কিছু প্রক্রিয়াজাত পণ্য যেমন- কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, হিমায়িত পিজ্জা, পপকর্ন, কফি ক্র্যামারস ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতে ট্রান্সফ্যাট ব্যবহার করা হয়। মূলত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার হয়।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে আমরা পাচ্ছি অসংক্রামক রোগ। এসব রোগে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এসব রোগের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু হাসপাতাল নির্মাণ করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ট্রান্সফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় হাউড্রোজেন গ্যাস থেকে রূপান্তরিত তেল হাইড্রোজেনেটেড অয়েল নামে পরিচিত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ‘স্বাভাবিক অবস্থায় তরল থাকলেও ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমাটবদ্ধ হয় তাই ট্রান্সফ্যাট। এছাড়া উচ্চতাপমাত্রায় দাহ্য তেল বা চর্বিও ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এটা প্রাথমিক চর্বির উৎস যা, রক্তের কোলস্টেরেল বাড়িয়ে দেয়। ‘ট্রান্সফ্যাট’ ট্রান্স আইসোমার ফ্যাটি এসিড হিসেবেও পরিচিত। ট্রান্সফ্যাট হার্টের যে কোনো রোগের জন্য স্বতন্ত্র শক্তিশালী উপাদান।
ট্রান্সফ্যাটের বা ট্রান্সফ্যাটি এসিডের উৎস মূলত দুটি- মাঠে চড়ে খাওয়া প্রাণীর অন্ত্রে এটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। এজন্য গরু-খাসির মাংসে, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে কিছু ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যায়। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার সময় এটা প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। এছাড়া ভেজিটেবল অয়েলে হাইড্রোজেন যোগ করলে তেল জমে যায়। এর ফলে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এবং ভাজাভুজি খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য আংশিক জারিত তেল ব্যবহার করে থাকে।
মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি ২০০২ সালে এক রিপোর্টে জানায়, ট্রান্সফ্যাট শরীরে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের (ষড়ি ফবহংরঃু ষরঢ়ড়ঢ়ৎড়ঃবরহ বা খউখ) পরিমাণ বাড়ায়। এলডিএল কোলেস্টেরলকে মানুষের শরীরের জন্য ‘মন্দ কোলেস্টেরল’ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এটা হৃদরোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ১৯৯৯ সালে প্রথম খাবারের মোড়কের গায়ে পুষ্টি তথ্যের সঙ্গে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণও উল্লেখ করার বিষয়টি প্রস্তাব করে, যা কার্যকরী হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুহার কমাতে এফডিএ ‘ট্রান্সফ্যাট’ নিষিদ্ধ করে। ট্রান্সফ্যাট নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে এফডিএ বলে, কৃত্রিমভাবে তৈরি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ তেলজাতীয় ক্ষতিকর দ্রব্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কারণ এটা নিষিদ্ধ করা হলে বছরে অনন্ত ২০ হাজার হার্ট অ্যাটার্ক ও ৭ হাজার মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা বলেন, অসচেতনতার কারণে আমাদের দেশে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ ৬০ বছর বয়সের আগেই মৃত্যুবরণ করে। ১২ মিলিয়ন মানুষ উচ্চরক্তচাপ নিয়ে জীবন ধারণ করে। যাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অসংক্রামক রোগ থেকে নিরাপদে থাকতে এড়াতে হবে ট্রান্সফ্যাট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকার জন্য ট্রান্সফ্যাট এড়িয়ে চলতে হবে। তাই যে কোনো পছন্দের খাবার কেনার আগে মোড়কের গায়ে লেখা ভালো করে পড়তে হবে। আজকাল সব খাবারের মোড়কের গায়ে সম্পৃক্ত চর্বি, কোলেস্টেরল এবং ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। এছাড়া খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরল কম থাকে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জমাট ডালডা, মাখন কিংবা চর্বি দিয়ে ভাজাভুজি না করে ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করতে হবে। বাসার রান্নায় একবার রান্না করা তেল পরবর্তীকালে ব্যবহার না করার চেষ্টা করতে হবে। ভাজা খাবারের পরিবর্তে সিদ্ধ করা কিংবা বেক করা খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে।