বুধবার   ০১ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

তারুণ্যের বিজয় ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:২০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস।

দিনটি আমাদের সকলের অতি প্রিয়, অতি আনন্দের। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বিজয় দিবস পালন করি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। কিন্তু বিজয় দিবসের গুরুত্ব কমেনি এতটুকু।

এই দিনটির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্ম ও বিশ্বকে বার বার মনে করিয়ে দেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা এবং বাংলাদেশ নামে একটি দেশের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের কথা।

 

এই দিনকে নিয়ে বড়দের মতো আমাদের তরুণ প্রজন্মের কল্পনায়ও উঁকি দেয় কতো কথা কতো স্বপ্ন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানাচ্ছেন রুমান হাফিজ।

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো: আবীর আলীর স্বপ্ন, প্রতিটা বাংলাদেশীর মতো আমিও স্বপ্ন দেখি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু সে স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবো এমনটাই আশা। বাক-স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এদেশে যেনো আকাশ-কুসুম কল্পনার মতো। এই আকাশ-কুসুম কল্পনা একদিন বাস্তবায়িত হবে এদেশে। তাহলেই মানুষ জানতে পারবে সত্যটা। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে পিষ্ট হয়ে কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এই আগ্রাসন বন্ধে তৎপর হতে হবে সরকারকে। সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতার কালো আলখাল্লা আমাদের দেশটাকে আরো পিছনে নিয়ে যেতে চাইছে। সকলে মিলে প্রতিরোধ না করলে পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।

 

তবে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানের কন্ঠে ভিন্ন সুর, বর্তমানে বাংলাদেশ অনেকাংশে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে এদেশের নারী সমাজ। বিজয়ের এত বছর পরও নারীরা পিছিয়ে থাকার কারণগুলো হল, দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা এবং সচেতনতার অভাবসহ আরো অনেক কারণ। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হল নারী আর এই নারীদের পেছনে রেখে দেশের উন্নতি অসম্ভব। রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, খেলাধুলা সর্বত্রই তারা নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন। ঘর সামলানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্র, বিশ্বে নেতৃত্বেও পিছিয়ে নেই নারীরা। তাই বিজয় দিবসে প্রত্যাশা করি এমন একটি নারী সমাজ যে সমাজে থাকবে না কোন বাঁধা, নারীরা থাকবে স্বাধীন, দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে থাকবে নারীর পদচিহ্ন , নিরাপদ থাকবে প্রতিটি নারী।

 

বাংলা বিভাগের নাজনীন সুরভী বলছিলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের কথা যদি বলি নি:সন্দেহে ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদিত হয়েছিল বিজয়- রবি। রক্তনদীর উজান বেয়ে যে বিজয় আমরা পেয়েছি, সে বিজয় দিবস আমাদের জাতির সামনে খুলে দিয়েছে অমিত সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার। চরম শোক ও পরম গৌরবে মন্ডিত মুক্তিযুদ্ধের পর সেই ডিসেম্বরে আমরা এটাই প্রমাণ করেছিলাম যে জাতি হিসেবে আমরা মোটেই ছোট কিংবা দূর্বল নই। আমাদের প্রয়োজন শুধু একাত্মতা পোষণের। আমরা জাতীয় জীবনে বারবার এক হতে চাই সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য যাঁরা ছিনিয়ে এনেছিল, তাঁদের একফোঁটা রক্তেরও যেন অমর্যাদা না হয়। পরাধীনতার শিকল থেকে বের হওয়া সেই বঙ্গবীরদের মতোই যেন লাল সবুজের পতাকা আমরা তরুণ প্রজন্ম মাথা উঁচু করে ধরতে পারি।

 

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর মাহমুদ অনুভূতি, বছর ঘুরে আবার এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১-এ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে যুক্ত হয় বাংলাদেশ নামক নতুন এক রাষ্ট্রের। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আমাদের অর্জনের খাতায় যুক্ত হয়েছে অনেক কিছুই। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জ্ঞান বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা, সামাজিক নিরাপত্তা, সুসাশন, জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। আমার প্রত্যাশা, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সকল অপশক্তি ও ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমাদের দেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তির দেশে পরিণত হবে। একই সাথে অনন্তকাল ধরে স্হায়ী হবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।

 

 

আর বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমেনা সুমি 'প্রত্যাশা-প্রাপ্তির' দিক থেকে বলছিলেন, ডিসেম্বর মাস এলেই বিজয়ের মহা উল্লাসের কথা মনে পড়ে। বিজয় মানে আনন্দ, বিজয় মানে প্রেরণা। বিজয় এক স্বর্গীয় অনুভূতির নাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশিরা বিশ্বের বুকে এক অপরাজেয় জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বিজয় এখনো যেকোনো ক্ষেত্রে আমাদের জয় ছিনিয়ে আনতে সাহস যোগায়। ইতিহাসের এক হিংস্র ও নিকৃষ্ট পাক বাহিনীর কাছ থেকে যদি আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি, তাইলে আজ কেন আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ দলাদলি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পাশবিকতাকে পরাভূত করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনা। আসুন একাত্তরের সেই ঐক্যবদ্ধ ও ত্যাগী শক্তি থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে তা কাজে লাগিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সকল অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বিজয়ের সেই স্বাদ প্রকৃতভাবেই অনুভব করি।