দরিদ্র নারী, শিশুর চিকিৎসায় স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:১৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের কড়ইতলি গ্রাম। এই গ্রাম থেকে রক্ষিতপাড়া অ্যাডভান্স প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলে পাক্ষিক স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা নিতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন সুমি। সুমির বাড়ি কুমিল্লায়।
স্বামীর গার্মেন্টে চাকরির সুবাদে কড়ইতলিতে বাসা ভাড়া করে থাকেন। তার ছেলে নীহার এই স্কুলেরই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। আর মেয়ের বয়স উনিশ মাস।
এখানে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে কিভাবে জানলেন, জানতে চাইতেই সুমি (৩০) বলেন, গতকাল এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার ছেলে এই স্কুলের ছাত্র। ওর বাম হাতের আঙ্গুলে ব্যথা আর ঠাণ্ডা লেগেছে।
হালডোবা ছাড়া এখানে কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নেই। অনেকটা দূর হয়ে যায়। তাই মাইকিং শুনে দশ টাকার টিকিট কেটে ছেলেমেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এলাম।
রক্ষিতপাড়ার জোলেখা বয়সের ভারে ন্যুজ। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। দুই ছেলে, দুই মেয়ে থাকলেও বুড়ো বয়সে তাকে দেখার কেউ নেই। ছেলেমেয়েরা যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মাকে দুমুঠো ভাতও কেউ দেয় না। আশপাশের মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে তার দিন চলে। অসুখ-বিসুখে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই তার।
এ প্রসঙ্গে জোলেখা (৮০) জানান, কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা করে। হাঁটতে কষ্ট হয়। কাশি হইছে। ডাক্তার আসবে শুইন্যা কষ্ট কইর্যা দেখাইতে আসছি। দশ টাকা টিকিট কাইট্যা ডাক্তার দেখাইতে পারমু। ওষুধও পামু।
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের পাক্ষিক স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রমের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা তুজ জোহরার মতে, এখানে যেসব নারী-শিশু রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন তাদের মধ্যে গর্ভকালীন সমস্যা, পায়ে পানি আসা, জ্বর-কাশি ইত্যাদি রোগের লক্ষণ বেশি।
১৬-১৭ বছরের গর্ভবতী কিশোরীর সংখ্যাই বেশি। অল্প বয়সে মা হওয়ার কারণে তারা তাদের গর্ভকালীন সমস্যাগুলো গুছিয়ে বলতে পারেন না। গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মী সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন। তাদেরকে গর্ভকালীনসময়ে চারবার চেকআপ করার পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামের অ্যাডভান্স প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলে চতুর্থ পাক্ষিক স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো. মনজুরুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারলেই মানুষের উন্নয়ন হবে। দরিদ্র মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। শিক্ষিত হবে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।
ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র মা ও শিশুরা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যশিক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সম্পর্কেও ধারণা পাবে। এর ফলে গর্ভবতী মা সুস্থ সন্তান জন্ম দেবে। সরকারি উদ্যোগে কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে একটি কর্নার করা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে পিকেএসএফ অংশী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে পিকেএসএফ-এর উপ ব্যবস্থাপক মো. আবুল বাসার জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় অর্থ সহায়তা করবে।
সরকারি তহবিলের পাশাপাশি পিকেএসএফ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। প্রত্যন্ত গ্রামের প্রত্যেক পরিবারকে পুষ্টি বাড়ি তৈরিতে আর্থিক সহায়তা, সবজি উপকরণ- সবজি বীজ, চারা সরবরাহ করা, মুরগির খামার করার জন্য কারিগরি সহায়তা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ওষুধ কিনে দেয়া, প্যারামেডিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, দরিদ্র নারী, শিশুর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ১০০ টাকার বিনিময়ে এক বছরের জন্য স্বাস্থ্যকার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এই কার্ডের মাধ্যমে এক বছর বিনা পয়সায় রোগী ওষুধসহ স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। তাদের প্রজননস্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রত্যেক স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে রোগী মাসে কমপক্ষে দু’দিন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এছাড়া রাজেন্দ্রপুর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নে আরও দুটি পাক্ষিক স্যাটেলাইট স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রম রয়েছে।
জানাকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ফাউগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্দিষ্ট দিনে সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি ও দাঁতের পরীক্ষাও নিয়মিত করা হয়।