আলোচনা থাকলেও আপাতত উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে না
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩৯ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের আলোচনা থাকলেও তা আপাতত হচ্ছে না। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম থাকছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও বর্তমান দায়িত্বে থাকছেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদেও বদল আসছে না।
সরকারের তিন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার একাধিক বিশেষ সহকারী সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার থেকে আলোচনা ছিল– জাহাঙ্গীর আলমকে সরিয়ে খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কয়েকটি গণমাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের খবরও আসে।
এসব গুঞ্জন ও সংবাদ নাকচ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন হচ্ছে– এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
আজ সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যাওয়ার আগে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এর আগে শেরেবাংলা নগরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক হয়। এরপর উপদেষ্টাদের নিয়ে আরেকটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন সরকারপ্রধান। সেখানে আসন্ন নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হলেও উপদেষ্টা পরিষদের রদবদল নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে থাকা একাধিক উপদেষ্টা।
রদবদলে রাজি নয় দলগুলো
একাধিক বিশেষ সহকারী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীরা ধরা না পড়ায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্ব ক্ষোভ জানাচ্ছেন। হাদির খুনিরা গোয়েন্দা ব্যর্থতায় ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে– এ ধারণা থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছেন ছাত্রনেতৃত্ব। হাদির মৃত্যুর পর সংবাদপত্রের কার্যালয়ে হামলার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তা সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সরিয়ে দেওয়ার আলোচনা হয়েছিল। তবে তা আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আপত্তি জানিয়েছে। তাই প্রধান উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোননি।
জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেন, গত সোমবার রাতেই সরকারকে জানিয়েছি– খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী ও সংস্থার তাঁর বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তাঁকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দিলে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা পাওয়া যাবে না। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, যা নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলবে। বর্তমান উপদেষ্টার মধ্যে কাউকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
গত মে মাসে খলিলুর রহমানের পদত্যাগ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। তবে পরের মাসে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলটির সঙ্গে খলিলুর রহমানের সম্পর্কের উন্নতি হয় বলে জানিয়েছে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র। খলিলুর রহমানকে নিয়ে অন্যান্য বাহিনীর আপত্তির কারণে বিএনপিও তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে চায় না।
আইজিপি বদল নয়
একাধিক উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারী জানান, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার কারণে বাংলাদেশ ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা পুলিশ ঠেকাতে পারছে না। ১৬ মাস পরও পুলিশের পুনর্গঠন হয়নি। বাহিনীটির মনোবলও দুর্বল। তারা অপরাধ ঠেকাতে কঠোর হতে পারছে না। এ কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা আইজিপি বাহারুল আলমকে সরিয়ে দেওয়ার আলোচনা ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার পদেও পরিবর্তন আনার আলোচনা হয়েছিল।
এক বিশেষ সহকারী সমকালকে জানান, জনপ্রশাসনের দিক থেকে এ বিষয়ে আপত্তি এসেছে। তারা সরকারকে বলেছে, নির্বাচনের আগমুহূর্তে রদবদলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আবার ছাত্রনেতৃত্বের দাবির মুখে পুলিশে পরিবর্তন হলে তা নির্বাচনের আগে প্রশাসনের বদলের দাবি উঠতে পারে।
একনেকের পর অনির্ধারিত বৈঠক
আজকের একনেক বৈঠকে থাকা এক উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নেওয়া নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনির্ধারিত এ বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোনো মূল্যে স্বাভাবিক রাখতে হবে– এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানান উপদেষ্টারা।
এ ছাড়া জুলাইযোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক চিত্র, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ও তুলে ধরা হয়।
