শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৫ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ওসমান হাদির মৃত্যুতে উত্তাল বাংলাদেশ

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:১২ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
 
#    ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান
#    ছায়ানট কার্যালয়ে হামলা চালায়
#    সাংবাদিকদের ক্রেন দিয়ে উদ্ধার

 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। তারা ভারত ও আওয়ামী লীগের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। তারা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিস জ¦ালিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে চরম এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়াও, চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। তবে অন্যান্য স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা থাকলেও তারা অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে এখন একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ভারত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। তাদের দাবি মানা না হলে ভারতের সঙ্গে কিছুতেই স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরিচালিত গণঅভ্যূত্থানের সামনের সারির নেতা শরিফ ওসমান হাদি প্রায় এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এই তরুণ নেতাকে টার্গেট করে রাজধানী ঢাকার কাকরাইলের কালভার্ট রোডে দুই তরুণ মোটরসাইকেলে এসে গুলিবর্ষন করে। হাদি তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবণতি ঘটলে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি আগামী শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, হাদির পরিবারের দায়িত্ব সরকার নেবে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হাদি ছিলেন নির্ভিক কন্ঠস্বর।

হাদির মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বাংলাদেশে ব্যাপক অরাজকতা শুরু হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে শাহবাগে সমবেত হয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। মধ্যরাতে একটি গ্রুপ প্রথমে প্রথম আলো ভবনে আগুন দেয়। তার কিছুক্ষণ পর ডেইলি ষ্টার ভবনে আগুন দেয়। দাউ দাউ করে জ¦লে আগুন। ডেইলি ষ্টারে দেওয়া আগুনে অনেকে আটকা পড়েন। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে একের পর এক হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের খবর আসতে থাকে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় জনতা। কয়েক দফা ভাঙার ফলে ৩২ নম্বরের বাড়ি প্রায় নিশ্চিহ্ন। এখন তারা এই বাড়িটিকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে চায়। কিছু কিছু বিক্ষোভকারী ৩২ নম্বরের বাড়িতে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে বলছে যে, তারা এই বাড়িতে একটি গণশৌচানাগার গড়ে তুলবে। ডেইলি স্টারে হামলার সময়ে পত্রিকাটির অনেকে ভবনের ভেতরে অনেকে আটকা পড়লে দমকল বাহিনী উদ্ধারে তৎপর হয়। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ের ছাদের ওপর আটকে পড়া কয়েকজন সাংবাদিককে বর্তমানে ক্রেনের মাধ্যমে উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিক্ষুব্ধ জনতা ছায়ানট কার্যালয়ে হামলা চালায়। ভাংচুর করে। চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের ওপরও হামলা চালানোর চেষ্টা হয়। তখন পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ এবং হামলাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। ধর্ম অবমাননার দায়ে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একইভাবে সারাদেশ থেকে হামলা ও ভাংচুরের খবর আসতে থাকে। এদিকে, শরিফ ওসমান হাদির লাশ আজ শুক্রবার দেশে আসবে। হাদির লাশ দেশে আসার পর পরিস্থিতি আবার পযবেক্ষনে রাখবে।

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অরাজক পরিস্থিতি নির্বাচনকে আবার অনিশ্চিত করে দেয় কিনা সেই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই নৈরাজ্য থামবে কিনা সেই প্রশ্নও রয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সহিংসতা নতুন নয়। ফলে এই পরি্িস্থতির মধ্যে নির্বাচনের কী হাল হয় সেটি বিবেচ্য বিষয়।