শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৫ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

জাতিকে কাঁদিয়ে হাদির বিদায়

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৪৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
 
জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি (৩২) গুলিতে আহত অবস্থায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধিন থাকার সময় গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান (ইন্নালিল্লাহি  ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। লাখ লাখ মানুষের দোয়া, প্রার্থনা আর আরাধনাকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তিনি এখন সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষ হাদি শহীদ হওয়ার খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রথম বলা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসাবে কবুল করেছেন।’ তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দুটি মিডিয়া হাউজে আগুন ও ভাঙ্গচুরের ঘটনা, রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। শহীদ হাদির লাশ আজ শুক্রবার বাংলাদেশে নেয়ার কথা রয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রথম জানাজার পর বীর এই শদীদের প্রধান জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে মানিক মিয়া এভিনিউতে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই জুলাই যোদ্ধার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো জাতি।  মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকবিহবল হয়ে পড়ে দেশবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা লাখ লাখ মানুষ হাদির সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। কিন্তু হাদিকে আর ফিরে পাননি তার সহযোদ্ধারা। এই আহাজারিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশিল।
বৃহস্পতিবার রাতেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে তাৎক্ষণিক ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান। তিনি হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় শুক্রবার প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা এবং আগামীকাল শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হওয়া সহযোদ্ধা ও বিপুলসংখ্যক বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। হাদি হত্যার বিচার চেয়ে ‘তুমি কে, আমি কে, হাদি-হাদি’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’সহ নানা স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন ঢাকা শহর। উত্তাল হয়ে ওঠে শাহবাগসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় শাহবাগে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শরিফ ওসমান হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচনি গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় তিনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর ফয়সাল করিম মাসুদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসী হাদির মাথা লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এর পর গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার হাড়ড়িখালী গ্রামের মুন্সি বাড়ির মরহুম মাওলানা আব্দুল হাদির ছোট ছেলে শরিফ ওসমান হাদি। নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ছিলেন মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদি। তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছোট ছেলে ছিলেন ওসমান হাদি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হাদি নিহতের ঘটনার পরপর ব্যাপকভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। তার সহকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ হাদির নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।