সারাদেশে সব ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১১:৫৩ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণে দেশের সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগে থেকেই যেসব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে যেসব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে শুধু ভোটের দিনের জন্য নতুন করে স্থাপন করা হবে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি সূত্র জানায়, শুরুতে নির্বাচন ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে কমিশন আগ্রহী ছিল না। ইসির এমন মনোভাব জানার পর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি তুলে ধরে। কোন কোন দল এ নিয়ে ইসিতে লিখিত আবেদন দেয়।
এই অবস্থায় ইসি থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে। সেগুলো সচল রাখা গেলে অতিরিক্ত ব্যয় তেমন বাড়বে না। আর যেসব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে কেবল ভোটের দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে ক্যামেরা বসানো যেতে পারে। এতে ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। এরপর ইসি উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়।
সম্প্রতি ইসির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সচিব এবং বিভাগীয় প্রধানদের বৈঠক থেকেও সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনা উঠে আসে। গত ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।
এবার দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি।
এদিকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ হাজার ২২৬টি ভোটকেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসি অবশ্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র’ না বলে এগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। এবার একসঙ্গে দুই ধরনের ভোট হওয়ায় এ সংখ্যা বাড়তে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রসহ সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়বে। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কোনো ধরনের অপরাধ ঘটলে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
ইসি সূত্র আরও জানায়, বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখা এবং যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষকে অন্তত ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সিসিটিভি পরিচালনায় যেসব ভোটকেন্দ্রে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে এসবের সংযোগ দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল করে সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও নির্দেশনাও দেন ইসি কর্মকর্তারা। সে সময় প্রায় ৪৪ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, ভোটকক্ষ ছিল ২ লক্ষাধিক। দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ হাজার ৭০৭টি; ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। নবম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি; ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি। তবে এই নির্বাচনগুলোতে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা তেমনভাবে ছিল না। এবার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচনে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত যেসব প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি আছে, সেগুলোকে সচল রাখতে নির্দেশনা দিতে হবে। এসব কেন্দ্র ভোটারের চলাচল উপযোগী করা, ভোটকেন্দ্রের অবকাঠামো সংস্কার এবং যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেখানে এসব সংযোগ দিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সমকালকে বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ নেই সেসব কেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষকে ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। আর সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে কাজ করবে। নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকভাবে পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
আরেক নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ভোটের দিন সন্ধ্যার পর ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ অত্যাবশ্যক। প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র সরাসরি পরিদর্শন করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র সশরীরে পরিদর্শন করবেন।
গত ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের তপশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা টানা ৯ ঘণ্টা ধরে ভোটগ্রহণ করা হবে।
আর জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
