নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১১ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার
- , সিইসি’র তফসিল ঘোষণা *
- প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে গণভোট। দুই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন একই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন (বাংলাদেশ সময়) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারে একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্রজনতার গণভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার পর এটাই প্রথম জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় দলটি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তবে বাংলাদেশে সক্রিয় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রদের নেতৃত্বে নবগঠিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করাকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক এক নির্বাচন হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। অন্যান্য দলগুলোও এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
আচরণবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এ এম এম নাসির উদ্দিন। সরকারি কর্মকর্তাদেরকে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না।’ সিইসি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। এরই মধ্যে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অকার্যকর পোস্টাল ভোটকে কার্যকর করা হয়েছে।’ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি এবং নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু ২২ জানুয়ারি, আর প্রচার শেষ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হয়েছে তাদের নিয়েই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দেড় বছর পর এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি ভোটাররা সংস্কার প্রশ্নে জুলাই সনদের ওপর রায় দেবেন, যাকে ‘গণভোট’ বলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর এটি জাতির ইতিহাসে সেরা নির্বাচন হবে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এবারই প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দিতে পারবেন। সরকারি চাকরিজীবীরাও এই নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে বলে ভোটের সময়ও এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে একটানা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে, যা এতদিন ছিল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার শপথ নেয়। এরপর ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো ইসি।
গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে হবে। এদিন দুই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি। গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়। আসন্ন নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। নির্বাচনে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীর মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ সদস্য কাজ করবেন। ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ইতোমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় এবার মূল প্রতিদ্বন্ধিতা বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, তরুণদের এনসিপি থাকছে ভোটের মাঠে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষা। এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে অর্থনীতির টিকে থাকা। পাশাপাশি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার মতো ইস্যু জড়িত বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশি ভারত অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে। মুখে না বললেও ভারতের চাওয়ার মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেবার সুযোগ থাকা অর্ন্তভুক্ত। যদিও আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে দলটি ভোটের মাঠেও থাকতে পারছে না।
