আইসল্যান্ডে দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্প, স্বাভাবিক না ভয়াবহ সংকেত?
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩২ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ রোববার
উত্তর আটলান্টিকের বরফাচ্ছন্ন দ্বীপ আইসল্যান্ড। পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভূমিকম্পের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি অভ্যস্ত। আগ্নেয়গিরি আর ভূ-তাপীয় বিস্ময়ের দেশটি যেন প্রতিদিনই নড়ে ওঠে। অনেকের কাছে সেটা অবাক করা হলেও ভূতত্ত্ববিদদের কাছে এটি একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা।
২০২৩ সালে আইসল্যান্ডে এমন একটি দিনও গেছে; যেদিন ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১,৬০০টির বেশি ভূমিকম্প হয়। একই বছর ভিন্ন দিনে ২৪ ঘণ্টায় ২২০০-এরও বেশি ভূমিকম্প বেসরকারিভাবে রেকর্ড করা হয়েছিল। এমনকি কোনো কোনো বছর দেশটিতে ১০ হাজারের বেশি ভূমিকম্পের তথ্যও মিলে। এর অর্থ হচ্ছে, আইসল্যান্ড যেন সারাক্ষণই কাঁপতে থাকে।
এতে বিস্মিত হওয়ার কারণ অবশ্যই আছে, কিন্তু আতঙ্কের তেমন নয়। কারণ আইসল্যান্ড ভূমিকম্পের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চলের একটি মিড-অ্যাটলান্টিক রিজের ঠিক ওপর দিয়ে দেশটি অবস্থান করছে। এই রিজে দুটি টেকটোনিক প্লেট উত্তর আমেরিকান ও ইউরেশিয়ান প্লেট ধীরে ধীরে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই বিচ্ছিন্নতাই সৃষ্টি করে শত শত ক্ষুদ্র কম্পন।
যে কারণে অন্য দেশের মানুষ ভয় পায়, আইসল্যান্ড সেগুলোকে গবেষণার সুযোগ হিসেবে দেখে। দেশটির ভূমি যেন এক বিশাল ভূ-বিজ্ঞান পরীক্ষাগার। ছোট ছোট কম্পন প্রতিদিনই সেখানে ‘সাধারণ খবর’। মাঝারি কম্পনেও মানুষ খুব বিচলিত হয় না।
কেন এত বেশি ভূমিকম্প হয়?
দ্বীপটির নিচে অসংখ্য ম্যাগমা চেম্বার
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চল
প্লেট টেকটনিকের দ্রুত গতিবিধি
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের আগাম সংকেত হিসেবে ক্ষুদ্র কম্পন
বিজ্ঞানীরা বলেন, দিনে হাজার ভূমিকম্পের মতো ঘটনা সাধারণত আগ্নেয়গিরি সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়।ম্যাগমা নড়াচড়া করলে আশপাশের শিলায় ফাটল তৈরি হয়, যার ফলে পরপর ছোট ভূমিকম্প হয়।
২০২৩ সালে এক দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্প হওয়ায় রেইকিয়ানেস উপদ্বীপে কয়েকটি শহরে সাময়িক সতর্কতা জারি হয়েছিল। এর মধ্যে ৪টি ভূমিকম্প ৪ মাত্রার বেশি ছিল। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, বড় অগ্ন্যুৎপাত আসন্ন। যদিও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে ভূমিকম্পের ঘনঘনতা ভবিষ্যৎ অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আইসল্যান্ডের মানুষ ভূমিকম্পকে জীবনের অংশ হিসেবেই নিয়েছে। ঘরবাড়ি ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈরি, জরুরি সেবার দলও সবসময় প্রস্তুত। পর্যটকরাও সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো কাছে থেকে দেখতে পারেন। গেইসার, ভূ-তাপীয় লেক, আগ্নেয়গিরির লাভা ফিল্ড সবই পৃথিবীর ভেতরের টানাপোড়েনের ফল।
আইসল্যান্ডে ভূমিকম্প কোনো আতঙ্কের গল্প নয়; বরং পৃথিবীর গভীরে কী ঘটে তার এক জীবন্ত সাক্ষ্য। দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্প অবশ্যই চমকে দেয়, কিন্তু সেই চমকের মাঝেই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অসাধারণ, অবিরাম পরিবর্তনের গল্প।
